কৃষিকাজ বদলে দিলো অল্পনা রাণীর জীবন
সাতক্ষীরা থেকে সৈয়দা তৌহিদা ইসলাম নিশি
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজলোর ধুমঘাট গ্রামে বাস করনে অল্পনা রাণী মিস্ত্রী। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের সাথে জড়িত তিনি। চৌদ্দ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তার। বিবাহিত জীবনে পা রাখার সাথে সাথে গৃহপালতি পশু দেখভালোর দায়িত্ব নিতে হয় তাকে। র্বতমানে তার দুজন সন্তান রয়ছে। আস্তে আস্তে তিনি আরো বড় পরিসরে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন।
ছোটোবেলা থেকেই তিনি কাদামাটি দিয়ে পুতুল হাড়ি, পাতিল বানাতে আগ্রহী ছিলেন। গাছ-গাছালি ঘেরা পরিবেশে তাকে মনোরমভাবে র্স্পশ করছে। কৃষিকাজে নিরন্তর প্রচেষ্টা র্বতমানে তাকে জেলা পর্যায়ে একজন মডেল কৃষক হিসেবে পরিণত করেছে। তার অর্জনে বারসিক’র অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সংবাদ মাধ্যমে অল্পনা রাণীর শ্রমগাঁথা প্রকাশ করতে তারা সাহায্য করে যা তাকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়।
বারসিক অল্পনা রাণীর র্কাযক্রম র্পযবক্ষেণ করে এবং কিভোবে তিনি আরও উন্নততর কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন সে সর্ম্পকে তাঁকে জানায়। কোন গাছ ফলাতে হবে, কিভাবে সেগুলোর চাষ করতে হবে, কোথায় গাছগুলো লাগালে ভালো হয় থেকে শুরু করে উঠোনে কোন শাক ফলাতে পারেন, উপজেলা থেকে কি ধরনের সুযোগ সুবিধা কৃষকদের দেয়া হয়ে থাকে, কোথায় গেলে তিনি চাষাবাদ করার জন্য উন্নত মোটর পেতে পারেন এর মতো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর তথ্য তারা অল্পনা রাণীকে জানান।
বর্তমানে অল্পনা রাণীর কৃষিক্ষেত্রে একুশ জাতের সিম, ওলকপি, ফুলকপি, বাধাকপি, বেগুণ গাজর টমেটো এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করেন। এছাড়াও মৌসুম ভেদে পেঁয়াজ, মরিচ, ওষুধি গাছের চাষ করেন। তিনি মাছ, গরু, মুরগিও চাষ ও পালন করেন। মাছের মধ্যে সাধারণত দেশী মাছের চাষ করেন-যেমন শৈল, কই, মাগুর লটা ইত্যাদি। এক বিঘা জায়গার মধ্যে এসকল মাছ চাষ করেন তিনি।
ছেলেমেয়ের পড়ালেখা এবং কাঁচামালের পিছনে ব্যয় বাদ দিলে তার মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকার মতো সঞ্চয় থাকে। অল্পনা রাণীর স্বামী তাকে সব কাজেই সহযোগিতা করেন, যেকোন পরিস্থিতিতে তাঁ পাশে থাকেন। প্রতিবেশীরাও মাঝে মাঝে তাঁকে সাহায্য করেন। এছাড়া তিনি অন্যান্য নারীদের জন্যও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেন। তাঁকে দেখে অনেকে কৃষিকাজে ঝুঁকে পড়েছেন।
অল্পনা রাণী একটি নারী সংগঠন তৈরি করেছেন যার নাম ‘শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠন, যেখানে র্বতমান সদস্য সংখ্যা পঞ্চাশ জন। তারা নিয়ম করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন কিভাবে তারা নিজেদের আরও ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন। তারা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাথায় রেখে সবাই মিলে চাঁদা তুলেন এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও তারা যেহেতু দূর্যোগপ্রবণ এলাকায় বাস করেন. তারা তাদের ফলানো সবজি এবং বিভিন্ন প্রজাতির খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখেন যাতে দূর্যোগের সময় খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে পারেন।