প্রাণবৈচিত্র্যের এই বিশাল ভান্ডারকে আমরাই রক্ষা করবো
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল, রামকৃষ্ণ জোয়ারদার ও মারুফ হোসেন মিলন
‘আমাদের এলাকায় এখনো অনেক ধরনের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রয়েছে। আমি আমার দাদা-দাদি ও মায়ের কাছে শুনেছি। এছাড়াও এর আগে আমাদের জয়নগর গ্রামের ঐ পাড়া বারসিকের এরকম শাকের মেলা হয়েছিল সেখানে আমি অনেক ধরনের শাকসবজি দেখেছি। আমরা তরুণরা যদি উদ্যোগী হই তাহলে হারিয়ে যাওয়া এবং এখনো যে সকল খাদ্য ভান্ডার আছে তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। আজ থেকে আমাদের শপথ নিতে হবে প্রকৃতির এই খাদ্য ভান্ডার আমরাই রক্ষা করবো।’ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন জয়নগর গ্রামের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী মরিয়ম।
গতকাল বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে বারসিক’র সহায়তায় কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর কৃষি নারী সংগঠন,স্বেচ্ছাসেবক টিম সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম ও সিডিও ইয়থ টিমের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রকৃতির সকল প্রাণ বৈচিত্র্য সংরকক্ষণ ও সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের ব্যবহার, গুণাবলী ও পরিচিতিকরণের লক্ষ্য “অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের মেলা’য় এ কথা বলেন তিনি।
মেলায় গ্রামের কৃষক-কৃষাণী, ইউপি সদস্য, শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সদস্য, সিডিও ও এসএসএসটির সদস্য সহ মোট ৭০ জন অংশগ্রহণ করেন। মেলায় ৯ জন শিক্ষার্থী, ১৭ জন কৃষাণীসহ মোট ২৬ জন অংশগ্রহণকারী তাদের এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহিত ১৪৪ প্রকার কুড়িয়ে পাওয়া শাক এবং ঔষধি গাছের স্টল প্রদর্শন করেন এবং এসব প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার, গুনাগুণ ও প্রাপ্তিস্থান বর্ণনা করেন।
বর্ণনা পরবর্তী বারসিক কর্মকর্তা মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় এবং উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। আলোচনায় সভায় বক্তব্য রাখেন জয়নগর কৃষি নারী সংগঠনের সাধারন সম্পাদক রোজিনা বেগম, কৃষাণী সাজিদা বেগম, ইউপি সদস্যা পাপিয়া হক, এসএস্এসটির রায়সুল ইসলাম, সিডিও ইয়থ টিমের আবু হুসাইন, বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডল ও রামকৃষ্ণ জোয়ারদার।
পাড়া মেলায় অংশগ্রহণকারী নারীরা বলেন, ‘আমরা উপকূলীয় এলাকায় বাস করি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমাদের টিকে থাকতে হয়। এলাকাতে একসময় বিভিন্ন ধরনের প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা ছিলো। যেদিকে তাকাতাম সেদিকে কোন না কোন উদ্ভিদও প্রাণী দেখা যেতো। এখন তা খুবই কম।’ তারা আরও বলেন, ‘একদিকে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে আমরা বিভিন্ন ধরনের সার কীটনাশক ব্যবহার করে প্রাণবৈচিত্র্য কমিয়ে ফেলছি। আমরা এখন বাজারে থেকে ঔষধ কিনে খাই। কিন্তু এ ঔষধ যে কি দিয়ে তৈরি তা আমরা জানিনা।’ তারা বলেন, ‘আজকে যতো ধরনের উদ্ভিদ এখানে দেখছি তার সবগুলোর কোন না কোন গুণ আছে। এগুলো তো ভিটামিনের উৎস। এ গুলোর কোন যত্ন নেওয়া লাগেনা এমনিতে হয়।’
অন্য নারীরা বলেন, ‘আমরা এখেনো অনেক পরিবারে এসকল উদ্ভিদ ব্যবহার করি। অনেকের মাসের প্রায় ৫-৭ দিনের খাদ্য এগুলো দিয়ে মিটানো হয়। আমাদের গবাদী পশুর চিকিৎসাও আমরা এগুলো ব্যবহার করি। আর যারা গ্রাম্য কবিরাজ আছে তারাও এগুলো ব্যবহার করেন।’
অংশগ্রহণকারী অন্যরা বলেন, ‘আজকের এ মেলার মাধ্যমে আমরা ও আমাদের সন্তানেরা এসব শাকসবজির গুণাবলী সম্পর্কে জানতে পেরেছি। গ্রাম পর্য ায়ে এসকল মেলা আরো বেশি করে আয়োজন করে সকল স্তরে সচেতন করা দরকার। তাহলেই আমাদের এ প্রাণবৈচিত্র্যের বিশাল ভান্ডারকে আমরা রক্ষা করতে পারবো।’