কৃষিখাতের উন্নয়নের সাথে জড়িত কৃষকের উন্নয়ন
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহিনুর রহমান ও শারমিন আক্তার
নদী খনন, ফসলী মাঠের জলাবদ্ধতা নিরসন, বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের মাত্রা বৃদ্ধি, কৃষি ভর্তুকি বৃদ্ধি, জৈব কৃষি প্রণোদোনা বৃদ্ধি, স্থায়ীভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন, নারী কৃষকদের ভূমির মালিকানাসহ সহজ শর্তে ঋণ প্রদান এবং ষাটোর্ধ কৃষকদের পেনশন স্কীম চালু করাসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে কৃষক সম্মেলন করেছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন কমিটি।
উক্ত কৃষক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিংগাইর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন।বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ্বাসের সঞ্চালনায় বলধারা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি কৃষক আব্দুল লতিফ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মো. করম আলী (মাস্টার), বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি আসমান, বলধারা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জসিমউদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম, বলধারা ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য চায়না আক্তার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র মন্ডল ও বাবুল চন্দ্র মন্ডল প্রমুখ। এছাড়াও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বারসিক কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল, নজররুল ইসলাম, বিউটি সরকার, আছিয়া আক্তার, রীণা আক্তার ।
কৃষক সম্মেলনের আলোচকগণ জানান, বাংলাদেশের ৮৫ % মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। বলতে গেলে এদেশের অর্থনীতি অনেকটা কৃষিনির্ভর। তারা বলেন, ‘অর্থনীতির উন্নয়ন মানে কৃষি খাত এবং কৃষির সাথে জড়িত মানুষগুলোর উন্নয়ন। কৃষি খাতের উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষিকেন্দ্রিক জীবন পরিচালনার জন্য কৃষককে নির্ভর করতে হচ্ছে কোম্পানির বীজ, সার, রকমারী সার ও কীটনাশকের উপর।’ তারা আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং অবকাঠামোগত সমস্যার জন্য কৃষক সঠিক ও পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হন। বর্তমানে কৃষি কাজ পরিচালনা করে কৃষকগণ দেখেন লাভের অংশ খুবই কম। অনেকসময় লোকসানও দিতে হয়।’ যে কারণে এ সম্মেলনের মাধ্যমে সকলেই দেশের সকল কৃষকের কথা বিবেচনা করে উল্লেখিত সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে ফসলের উৎপাদন খরচ কমানো, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা, প্রান্তিক পেশাজীবী মানুষের জীবিকায়নে প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস্য ও ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রাণবৈচিত্র্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। উক্ত প্রদর্শনীতে ২৯ প্রকারের দেশীয় পিঠা, ১০ প্রকারের স্থানীয় কৃষি যন্ত্রপাতি, পুথির ব্যাগ ও নকশীকাথা সহ ১২ প্রকারের হস্তশিল্প, ১৫ প্রকারের দেশীয় মাছ, ১৫ প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ, ১৭ প্রকারের অচাষকৃত উদ্ভিদ, ২০ প্রকারের স্থানীয় ধান বীজ, ১৪ প্রকারের স্থানীয় সবজি বীজ, ৩ প্রকারের জৈব সার, ২ প্রকারের জৈব বালাইনাশক, ১০ প্রকারের দেশী শাকসবজি উপস্থাপন করা হয়।
এছাড়া প্রাণবৈচিত্র্য মেলা পরিদর্শনের সময় আমন্ত্রিত অতিথিগণ দেশী ও বৈচিত্র্যময় ফলজ, বনজ, ঔষুধি ও তাল খেজুর বৃক্ষ রোপণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বলধারা ইউনিয়ন সাংষ্কৃতিক দলের পরিচালনায় কৃষকের অধিকার বিষয়ক গান পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।