করোনা মোকাবেলায় বারসিক নেত্রকোনা রিসোর্স সেন্টারে গৃহীত উদ্যোগ
নেত্রকোনা থেকে অহিদুর রহমান
করোনা মহামারী বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিশ্বে এমন কোন দেশ ও দেশের মানুষ নেই যারা এর ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শংকিত নয়। এর ভয়াবহ প্রভাব থেকে আজ ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, গ্রাম-শহর, শিশু-যুবক-প্রবীণ কোন মানুষই মুক্ত নয়। প্রায় চার মাস হয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত এ মহামারি থেকে মুক্ত হওয়ার কোন সুনির্দিষ্ট পন্থা বের করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই দুনিয়া ব্যাপি বর্তমানে যে বিষয়টির উপর সব থেকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে সচেতনতার মাধ্যমে সংকট থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। তারই অংশ হিসেবে প্রতিটি দেশ ও সরকার গ্রহন করেছে লকডাউনের সিদ্ধান্ত। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশ সরকারও গত ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির নামে কার্যত লকডাউনেরই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে বলে জাননো হয়েছে।
এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার, গণমাধ্যম, সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করা তথা মানুষের সংস্পর্শে না আসার কথা। আর সেটি কার্যকর করতে গিয়ে দিন আনে দিন খায় এ ধরনের নিন্ম ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো পড়েছে চরম সংকটে। ফলে সরকারি নানা প্রচেষ্টাসহ শত বাধার পরেও এই শ্রেণির মানুষগুলোতে আর ঘরে আঁটকিয়ে রাখা যাচ্ছেনা। খাবারের সন্ধানে একের পর এক মানুষ বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়- যা প্রকারন্তরে এদেশে করোনা ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। করোনা মোকাবেলায় এটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বারসিক নেত্রকোনা রিসোর্স সেন্টার ফেব্রুয়ারী মাস থেকেই করোনা মহামারীর ভয়াবহতা অনুমান করে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি বিষয়ক প্রচারণা। বারসিক ঢাকা অফিসের নির্দেশনায় করোনা ভাইরাস কি, এটি কিভাবে ছড়ায়, এ ভাইরাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার উপায় প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে নেত্রকোনা অঞ্চলের জনসংগঠনগুলোর সাথে বিশেষ করে এলাকার যুব সংগঠনের সদস্যদের সাথে আলোচনা করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে দেয়া হয় প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। গ্রামের নারীদের শেখানো হয় কিভাবে নিজেরায় মাক্স তেরি করতে পারি, কোন কোন উপকরণগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা দরকার, হাঁচি-কাশির শিষ্ঠাচার কী, সাবান বা ছাই দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড কিভাবে হাত ধুতে হবে প্রভৃতি বিষয়গুলো অবহিত করা হয়।
পূর্ব থেকে এসব প্রস্তুতির ফলাফল হিসেবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেত্রকোনার যুব সমাজসহ জনসংগঠনের সদস্যরা চলমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গ্রহন করে বেশ কিছু পদক্ষেপ যা এলাকার মানুষ, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের কাছে প্রসংশিত হয়। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেত্রকোনা এলাকার যুবসমাজসহ জনসংগঠনের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে নি¤েœ কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বারসিক ও স্থানীয় জনসংগঠনের জনসেচতনামূলক প্রচারণা
যুব ও জনসংগঠনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে খাদ্য ও প্রয়োনীয় উপকরণ সহযোগিতা
নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজ সদস্যদের উপহার হিসেবে নিজেদের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ
যুবকদের এ ধরনের উদ্যোগ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নেত্রকোনা এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও মহাল্লার নারী ও কিশোরীরা নিজ নিজ পরিবারে মোটা সুতি কাপড় দিয়ে মাক্স তৈরি করে নিজ এলাকায় অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী এলাকায় মানুষের সাথে মানুষের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে যুবদের সামাজিক উদ্যোগ
হাওরের বোরো ধান কাটা ও করোনাজনীত স্বাস্থ্য ঝুঁকি
বর্তমান গ্রামে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালনি সবজি চাষের উপযুক্ত সময়। এখন পর্যন্ত গ্রামে সবজি চাষের ক্ষেত্রে বীজের একটি বড় জায়গা দখল করে আছে বাজারের উফশি ও হাইব্রিড জাতের সবজি বীজ। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বাজার বন্ধ থাকায় কৃষক পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসলের বীজের চাহিদা, কৃষকরা পড়েছে বীজ সংকটে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরি ভুমিকা পালন করছে নেত্রকোনায় বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠা কমিউনিটি বীজ ব্যাংকগুলো। প্রতিদিনই কোন না কোন মানুষ এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে শুরু করেছে সবজির চাষ। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষক-কৃষক বীজ বিনিময় প্রক্রিয়া। করোনায় আর যা হোক কৃষি উৎপাদনতো আর বন্ধ করা যাবেনা।