সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে হরিরামপুরের চরাঞ্চল এলাকা
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
ভূমিকা
ভগবানচর, হরিহরদিয়া, পাটগ্রাম, লেছড়াগঞ্জ গ্রাম সমূহ হরিরামপুর উপজেলার পদ্মানদীর সৃষ্ট দ্বীপচরাঞ্চল। এই দ্বীপচরটিতে কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার বসবাস করে। কৃষি প্রধান এই দ্বীপচরটি নানানভাবে পিছিয়ে। যোগাযোগ, শিক্ষা, পরিবহন ও অন্যান্য সরকারি সেবা হতে বঞ্চিত। দিনের আলো ও কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে তাদের কাজ করতে হতো। বর্তমানে তারা সরকারের ঘোষিত শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে দেশের ৪৬১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কর্মসূচি ঘোষণা করে ৮০ হাজারের বেশি গ্রামে ও সাড়ে ৩ কোটির বেশি বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের নিকট বিদ্যুৎ ইতিমধ্যে পৌছেছে এবং আরো দূর্গম, চরসহ প্রত্যন্ত গ্রামের বিদ্যুৎ পৌচ্ছানোর জন্য আলোর ফেরিওয়ালা, দূর্যোগে আলোর গেরিলা দল বিভিন্ন নামে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনস্ত সংস্থাসমূহের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রদানের অঙ্গীকারে কাজ করছে।
বিদ্যুৎ শক্তির উৎস: ১) অ-নবায়নযোগ্য শক্তি(প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলয়াম ইত্যাদি) ২) নবায়নযোগ্য শক্তি (সৌর,বায়ু, জৈব, সমুদ্র, জল ভূতাপ, শহুরে আবর্জনা ইত্যাদি) ও ৩) পারমাণবিকশক্তি। প্রায় সকল উৎস হতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদিন হয় তবে প্রাকৃতিক গ্যাস, সৌরশক্তি হতে বেশি উৎপাদিত হয়। কয়লাভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চলছে তাই পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি।
সৌরবিদ্যুৎতে আলোকিত হরিরামপুরের চরাঞ্চল
নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো এমন শক্তির উৎস যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং এর ফলে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। উৎসসমূহ যেমন সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ু প্রবাহ, জল প্রবাহ, সুমদ্রতরঙ্গ, জোয়ার-ভাটা, সুমদ্র-তাপ, ভূ-তাপ ইত্যাদি সবসময় আছে এবং থাকবে। সভ্যতার শুরু থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে অ-নবায়নযোগ্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারে শুরু হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে তরান্বিত করে।
সৌরশক্তি যেহেতু সহজ একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি তাই তার আলো ও তাপ দুই ধরনের শক্তি থেকে সোলার প্যানেল ও কনসেন্ট্রেটেড সোলার পাওয়ার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন পৃথিবীতে এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ সৌরশক্তি পৌঁছায় তা দিয়ে পুরো পৃথিবীর দুই বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যাবে।
দেশের দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ হিসেবে হরিরামপুর চরাঞ্চলে বিতরণ খুঁটি স্থাপন ও প্রায় ২৫০ কিলোওয়াট পিক উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। এ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বারসিক নানাভাবে চরাঞ্চলের মানুষকে সহায়তা করে আসছে। বারসিক মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা পালন করতে পারে। সৌরশক্তি ব্যবহার করে চরাঞ্চলের মানুষ তাদের শিক্ষাসহ সরকারি তথ্যগত ও ডিজিটাল সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। সরকারের এই শতভাগ বিদ্যুতায়নের সফলতা চরবাসী পাচ্ছে তাতে বারসিক মানিকগঞ্জ গর্ব অনুভব করে
উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর বারসিক মানিকগঞ্জ হরিরামপুর টিমের সদস্য সত্য সাহা, মুক্তার হোসেন ও বারসিক হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নিতাই চন্দ্র দাসসহ চরের জীবনমান কার্যক্রমগুলো দেখার জন্য হরিরামপুর উপজেলার লেছড়া ই্উনিয়নের ভগবানচর পরির্দশন করেন।