এই ‘মিলনমেলা’ আমাদের সবাইকে আরও আত্মবিশ্বাসী ও অনুপ্রাণীত করুক
ঢাকা থেকে সুদিপ্তা কর্মকার
৮ জুলাই। বৃহস্পতিবার। বারসিক’র ঢাকাসহ চারটি কর্মএলাকার প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তা একত্রিত হলেন! তবে স্বশরীরে নয়; ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে! বারসিক’র অনেক কর্মকর্তার কাছেই এটি প্রথমবারের মতো। এর আগে হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কর্মএলাকার বিভিন্নজনের সাথে কথা হয়েছে অনেকের, একসাথে প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণ করেছেন, ফোনে কথা বলেছেন কিন্তু এভাবে একসাথে সবার সাথে কথা বলা ও পরস্পরকে দেখা এটাই সম্ভবত প্রথম! তাই তো প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের মুখ থেকে গর্বভরে এই বাক্যাটি বেরিয়েছে ‘বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হিসেবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজ আমরা আমাদের প্রায় সকল সহকর্মীদের নিয়ে সভা করতে পারছি। বারসিক এই প্রথম তার সকল কর্মএলাকার প্রায় সকল সহকর্মীদের নিয়ে স্টাফ সমন্বয় সভা করে। করোনা মহামারীর মধ্যে এটি আমাদের একটি বড় পাওয়া!’ শুধু নির্বাহী পরিচালকের মুখে নয় অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রতেক্যেই এই মিলনমেলাকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক এবং আত্মবিশ্বাসের আভা প্রষ্ফুটিত হয়েছে।
গতকাল ৮ জুলাই, ২০২১ তারিখটি বারসিক’র প্রতিটি কর্মকর্তার জন্য বিশেষ কিছু, মনে রাখার মতো একটি দিন। স্মৃতির মণিকোঠায় সংরক্ষণ করার মতো দিন। কারণ যাদেরকে আমরা দেখিনি, যাদের কথা কখনও বাস্তবে শুনিনি কিংবা যাদেরকে আমরা দেখতে চেয়েছি, তাদের কথা শুনতে চেয়েছি কিংবা যাদের কাছে আমরা আমাদের বার্তা পৌছাতে চেয়েছি অথবা আমাদের কাজ সম্পর্কে যাদেরকে জানাতে চেয়েছি সেটি আমরা ‘৮ জুলাই ২০২১’ করতে সমর্থ হয়েছি। অবশ্য অনেকের জন্য হয়তো এটি শুধুমাত্র একটি নিয়মতান্ত্রিক সভা হতে পারে আবার অনেকের জন্য এটি ‘অপ্রতাশিত’ একটি পাওয়ার মতো। তাই তো রাজশাহী অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বারসিক’র একজন ঢাকা কর্মকর্তাকে অনেকদিন থেকে দেখার আকুতি প্রকাশ করে হাসিমুখে বলেই ফেলেছেন ‘আপনাকে অনেকদিন থেকে দেখতে চেয়েছি। আজ দেখতে পেলাম। আমার বেশ ভালো লেগেছে!’ আবার অনেকে বলেছেন, ‘আজকের এ সভায় সবাইকে দেখতে পেয়ে বেশ ভালো লেগেছে, আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বারসিক’র এতজন কর্মকর্তাকে দেখে।’ আবার কেউ কেউ বলেছেন, ‘এ সভার কারণে আমরা আজ সবার সাথে আমাদের কাজ সহভাগিতা করতে পেরেছি, বারসিক’র কাজ শুরুর পর থেকে এই প্রথম একসাথে সবাইকে দেখতে পেয়ে বেশ ভালো লাগছে। বারসিক পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে দেখতে পাওয়াটা বিশেষ কিছু।’
পরস্পরকে দেখা, কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি বারসকি’র চলমান কাজ, অর্জন, করোনা পরিস্থিতি, কৃষি, কৃষক, দুর্যোগসহ নানান বিষয় নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় প্রতিটি কর্মএলাকার কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন, মানুষকে সচেতন করার কথা বলেছেন, করোনা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বারসিক উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাই তো রাজশাহী কর্মএলাকার সুলতানা খাতুন বলেন, ‘গ্রামের লোকজন করোনাকে ভয় পায়না তারা করোনার জন্য দেয়া লকডাউনকে ভয় পায়। লকডাউনের জন্য কৃষকরা তাদের কৃষজাত পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারছে না। আমরা তাদের সাথে ফোনে কথা বলি প্রতিনিয়ত।’ একই কথা বলেছেন সাতক্ষীরার বিশ্বজিৎ মন্ডল, মানিগঞ্জের মো. মাসুদুর রহমান, শিমুল বিশ্বাস, নেত্রকোনার অহিদুুর রহমান, হেপী রায়।
সভায় কৃষি ও কৃষকের বিষয়, শতবাড়ির অগ্রগতি, বীজ সংরক্ষণ, প্রায়োগিক গবেষণার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজশাহীর অমৃত কুমার বলেন, ‘যেকোন মহামারীতে কৃষিকাজ থেমে থাকে না, গ্রামের মানুষ বাড়ির উঠানে, আশেপাশের খালি জায়গায় কৃষিকাজ করে যাতে তাদের এই দুর্যোগে বাইরে থেকে বেশি কিছু না কিনে নিজের বাড়ি থেকেই খাদ্যের যোগান হয়ে যায়।’ অনলাইন এ সমন্বয় সভায় বারসিক’র ভবিষ্যত পরিকল্পনা, করোনা পরিস্থিতিতে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা যায়, সরকার কর্তৃক ঘোষিত লকডাউন মান্য করা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বারসিক’র নির্বাহী পরিচালক সবাইকে সরকারের বিধিনিষেধ পালন করার আহ্বান জানান।
এই অনলাইন সমন্বয় সভাটি বারসিক’র প্রতিটি কর্মএলাকার বিভিন্ন তথ্যও বিনিময় হয়েছে। ঢাকায় বস্তিবাসী নিয়ে কাজ, ঢাকা কলিং নামের একটি প্রকল্প, যা ঢাকার বস্তি এলাকায় বাস্তবায়িত হয়েছে সে সম্পর্কে চারটি কর্মএলাকার কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন এবং সম্প্রতি বারসিক’র কাজের সাথে জড়িত নতুন কর্মকর্তারাও বারসিক’র প্রকাশনাসহ নানান বিষয় সম্পর্কে অবগত হয়েছেন যা তাদেরকে অনুপ্রাণীত করছে।
এই অনলাইন সভার মাধ্যমে বারসিক’র প্রতিটি পরিবরের সদস্যরা পরস্পরকে দেখতে পেরেছেন, তাদের কথা শুনতে পেয়েছেন এবং নিজেদের কথাও ব্যক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন। সভায় প্রায় প্রতিটি কর্মকর্তাই হাসিমুখে তাদের পরিচয় দিয়েছেন, কাজ বর্ণনা করেছেন এবং নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। সভায় অংশগ্রহণকারীরা মনে করেন এই মিলনমেলার মাধ্যমে পারস্পরিক কাজের সম্পর্কটি আরও মজুবত হবে, আরও শক্তিশালী হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে মানুষ ঘরে থাকার চেষ্টা করেছেন। এতে করে তাদের পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের সাথে নিত্যদিন মিথষ্ক্রীয়া করতে পেরেছেন, কুশল বিনিময় করছেন, সেবা করছেন এবং সহভাগিতা করছেন। তাই তো নেত্রকোনার খাদিজা আক্তার বলেন, ‘করোনা মহামারীতে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে, শারীরিক দূরত্ব থাকলেও মানুষ সবাই মিলে এই পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছে।’ এই করোনা পরিস্থিতির কারণে বারসিক ঢাকাসহ চারটি কর্মএলাকার কর্মকর্তাকে পরস্পরের সান্নিধ্য থেকে শারীরিকভাবে দূরে ঠেলে দিলেও মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। অনলাইন এই সমন্বয় সভার মাধ্যমে সেটি প্রতিফলিত হয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে সংঘটিত এই ভার্চুয়াল ‘মিলনমেলা’ বারসিক পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে আরও উৎফুল্ল, প্রাঞ্জল, আত্মাবিশ্বাসী, গতিশীল এবং অনুপ্রাণীত করুক!