মানিকগঞ্জে কিশোরীদের সক্ষমতা উন্নয়নে বারসিক’র নানান উদ্যোগ
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
বাংলাদেশে তিন কোটি বিশ লাখের বেশি কিশোর-কিশোরী রয়েছে। মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ এই কিশোর-কিশোরী। কিশোরীদের এই বেড়ে উঠার সময়টাতে কিশোরীরা স্বাধীনতা চায়, নতুন কিছু করতে চায়, বাড়তি দায়িত্ব নিতে ভালোবাসে। কৈশোর বয়সটা হচ্ছে সেই সময় যখন মানুষের মূল্যবোধ ও দক্ষতা তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই বয়সী ছেলে-মেয়েদের সম্ভাবনা অবকিশিতই রয়ে যায়।
বাংলাদেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় কিশোরীদের কোনো মতামত প্রদান করার সুযোগ নেই বললেই চলে। সে কারণে তাদের প্রয়োজন ও সমস্যার বিষয়গুলোতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নজর দেওয়া হয় না। কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা সম্পর্কেও মানুষের জানার এবং জানানোর আগ্রহ অনেক কম লক্ষ্য করা যায়।
স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে কিশোরীদের অভিগম্যতা বা প্রবেশাধিকারের সুযোগ কম থাকায় কিশোরীরা তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায়। পরিবারের মায়েদের সাথে বস্থুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকেনা অধিকাংশ পরিবারেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শারীরিক শিক্ষা বইয়ে বয়োঃসন্ধি বিষয়টি পাঠ্য থাকলেও বিদ্যালয়গুলোতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হয়না। তাছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে পুরুষ শিক্ষক বিয়ষটি পড়ান বিধায় বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের অজানাই থেকে যায়। কারণ আমাদের সমাজে যেখানে মায়েদের সাথেই কিশোরীরা মন খুলে তার সমস্যার কথা বলতে পারেনা সেখানে পুরুষ শিক্ষকের কাছে ক্লাস করে জানতে চাওয়াটা কল্পনাতীত বটে।
এই কিশোরীদের একটা বড় অংশ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অশিক্ষা ও দারিদ্র্যতা এর অন্যতম কারণ। তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিকতার কারণে অনেক পরিবার মনে করে মেয়েদের লেখাপড়া করার দরকার নেই। নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়াও এক্ষেত্রে বড় একটি বাধা হিসেবে কাজ করছে।
প্রচন্ড পিতৃতান্ত্রিকতার কারণে কিশোরীরা কৈশোরেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়। ফলে কিশোরীদের গর্ভধারণের হার এদেশে অনেক বেশি। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবায় সেভাবে তাদের প্রবেশাধিকার না থাকায় প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান থাকেনা। এর প্রভাবে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কৈশোরেই ঝরে পড়ছে অনেক কিশোরীর প্রাণ। কিশোরীরা মন খুলে কথা বলতে পারেনা। ইচ্ছে মত কোথাও যেতে পারেনা। মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতা থাকে না। পরিবার থেকে সব কিছুতেই বাধা দেওয়া হয়। মায়েদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে না। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই তারা বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। সমসুযোগ ও সমঅধিকার না পাওয়ার কারণে অনেক প্রতিভা ও সম্ভাবনার অধিকারী হওয়া সত্তে¡ও অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে অনেক কিশোরীর জীবন।
কিশোরীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে তাদের জীবনাভিজ্ঞতার আলোকে চিন্তার জগতকে বিকশিত করা যায়। কিশোরীরা যাতে নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে মর্যাদার সাথে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে অবদান রাখতে পারে সেই সক্ষমতা তৈরির উদ্দেশ্য নিয়েই কিশোরীদের সাথে কাজ করে আসছে বারসিক। বারসিক কিশোরীদের সচেতন করে তোলার জন্য এবং তাদের পরিবর্তন এজেন্ট হিসেবে রূপান্তরে সহযোগিতা করার জন্য কিশোরীদের সংগঠন তৈরিতে সহযোগিতা করে,সংগঠনের নীতিমালা ও গঠনতন্ত্র তৈরিতে সহযোগিতা করে, ইস্যু ভিত্তিক আলোচনা করে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে, বয়োঃসন্ধি বিষয়ে আলোচনা করে তাদের সচেতন করে সামাজিক নানান সমস্যা বিশেষ করে বাল্যবিয়ে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে সহায়তা করে, কিশোরীদের অংশগ্রহণে বিনোদনের জন্য বনভোজন ও অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর আয়োজন করে, জেন্ডার, বৈচিত্র্য, আন্ত:নির্ভরশীলতা ও বহুত্ববাদী সমাজ বিষয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে যাতে কিশোরীরা এ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারে, নেতৃত্ব বিকাশ বিষয়ে আলোচনা ও নেতৃত্ব তৈরিতে সহযোগিতা করে এবং বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।