আদিবাসীদের ফসলি জমি বালির দখলে
মো: অহিদুর রহমান
নেত্রকোনা জেলার চন্দ্রডিঙ্গা গ্রাম। গ্রামের সীমান্ত আদিবাসি কৃষকেরা দিন দিন ভূমিহারা হচ্ছেন। প্রতিবছরই বালিতে ঢেকে যাচ্ছে উর্বর কৃষি জমি। পাহাড়ি ঢলে পাহাড় ধ্বসে বালি, নূরিপাথর পানির সাথে চলে আসে কৃষকের জমিতে। জমি হারিয়ে কৃষকেরা পেশাহীন হচ্ছে। বাঁচার তাগিদে স্থানীয়ভাবে অভিবাসি হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অভিবাসি হওয়ার প্রাথমিক স্তর হলো স্থানীয়ভাবে অভিবাসি হওয়া। বসতভিটায়, কৃষিজমি, ডোবানালায় বালি আর বালি। প্রতিবারের মতো এবারের ঢলে ফসলের জমি, সবজি, বসতভিটার সবজি বাগান,পুকুরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদের ক্ষতি হয়েছে ও খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে।
পানি নামলে অন্যান্য বছরের মতো আমন আবাদের স্বপ্ন ছিল কৃষক মনোরমা রিছিলের। কিন্তু পানি নামার পর দেখা গেল ৩ বিঘা উর্বর জমির পুরোটাই বালিতে ঢেকে অনাবাদি হয়ে গেছে। পরিবারের খাবার জোগাতে বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে এলাকা ত্যাগ করতে হবে। শুধু চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষকের এই অবস্থা না। ফুলবাড়ি, বেতগড়া, সন্যাসীপাড়া, কদমতলী এলাকার অনেক কৃষকের কপালে আসন্ন খাদ্যসংকটের আশঙ্কায় চিন্তার ভাঁজ। পাহাড়ি ঢল, পাহাড় ধ্বস, ভাঙন ও বাঁধ ভেঙে চন্দ্রডিঙ্গা কমপক্ষে এক হাজার হেক্টর আবাদি জমি ঢেকে গেছে বালিতে। গত কয়েক বছরে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা অভাব মোচন করলেও এ বছর আমন চাষ করতে না পেরে খাদ্যসংকটের শঙ্কায় পড়েছেন।
বসতভিটার আশপাশেও বালির স্তর পড়েছে। ডোবা পুকুর বালিতে ভরে গেছে। বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষক স্বপন মানখিন বলেন, গত বছর যে জমিগুলোতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছিল, এবার সবগুলো জমি বালিতে ঢাকা পড়েছে। তার ২ বিঘা জমি বালিতে ঢাকা পড়েছে, এসব জমিতে কয়েক বছর ফসল ফলানো যাবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তিনি। একই অবস্থা যন্ত্র হাজং, পরিমল হাজং, মধাব হাজং, সলোমান রিছিল, অর্জুন হাজং,পৃত্তিশ রংখেংসহ শত কৃষকের। বালির কারণে আবাদ না হওয়ায় কৃষক ও দিনমজুর পরিবারগুলোতে আসন্ন খাদ্যসংকটের দুশ্চিন্তায় ভর করেছে।
বালি যেমন একটি সম্পদ। তেমনি প্রতিবেশগত কারণে কারো কারো জন্য এটি দুর্যোগও বটে। বালি দুর্যোগের কারণ হয় তখনই যখন কোন কৃষকের জীবিকার অবলম্বনে আঘাত করে ও ফসল উৎপাদনের পথ রুদ্ধ করে দেয় চিরদিনের মত। সার্বিকভাবে বিপদাপন্ন করে তুলে কৃষকের পেশাকে ও তার খাদ্য নিরাপত্তাকে। বালি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে চন্দ্রডিঙ্গা একটি। এই গ্রামের জনগোষ্ঠীদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় প্রতিবছর। ভারতের অবকাঠানো উন্নয়নের জন্য পাহাড় কাটার ফলে মানবসৃষ্ট বালি দুর্যোগটি স্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে এই এলাকায়। যাদের ফসলী জমি বালিতে ভরাট হয়ে গেছে সেই জমিগুলো পতিত পড়ে আছে আজ থেকে তিন বছর ধরে। কিন্তু এ বছরের পাহাড় ধ্বসের কারণে নতুন করে দুর্যোগ ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে নতুন করে। মাটি এখন বন্ধ্যা হয়ে গেছে।
সেই জলবায়ু সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ,পানির পানির সমস্যা, বন্যপ্রাণির আক্রমণ সাথে নিয়েই রংছাতি,লেংগুরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসি কৃষকেরা দুর্যোগের পরও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করেন। এই মাটি এই ভিটা ছেড়ে চলে যাওয়ারও সুযোগ নেই। এভাবেই ঠিকে আছে যুগ যুব ধরে কলমাকান্দার সীমান্ত অঞ্চলের আদিবাসি কৃষকেরা।