সাম্প্রতিক পোস্ট

মরুময়তা দূরীকরণে বৃক্ষরোপণ অভিযান

নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাতলা বন একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম। এ গ্রামের পূর্বপাশে বয়ে গেছে মহাদেও নদী, পশ্চিমে কচুগড়া গ্রাম, দক্ষিণে বরুয়াকোনা গ্রাম আর উত্তরে মেঘালয় রাজ্যের বিশাল পাহাড়। গ্রামটি মহাদেও নদীর তীরে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে অনেক দিন আগে এ মহাদেও নদীটি এক সময় পাতলাবন গ্রামের ভিতর দিয়েই প্রবাহিত ছিল। কিন্তু কোন এক কারণে মহাদেও নদীটি তার গতি পথ পরিবর্তন করে সোজা চলে যায় ভাটির দিকে। ফলে পূর্বের নদীটি বালুময় একটি মরু বা বালুময় ভূমিতে পরিণত হয়ে যায়।


এ মরু বা বালুময় এলাকাতেই এখন বসতি স্থাপন করেছেন প্রায় ৩০টি আদিবাসী পরিবার। মরু বা বালুময় স্থান হওয়ার কারণে এখানে সহজে কোন গাছ গাছালি বাঁচে না বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে। তাই গাছ রোপণ করার পূর্বে নির্দিষ্ট স্থানে গর্ত করে বালু সরিয়ে সেখানে ভালো মাটি ও গোবর মিশিয়ে দিয়ে তারপর রোপণ করতে হয়। এভাবে কিছু পরিবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন মরু বা বালুময় স্থানে গাছগাছালী ও শাকসব্জি রোপণের জন্য। বর্ষাকালে এখানকার মানুষ একটু স্বস্তি পান। কারণ তখন বাড়ির আশপাশে থাকা গাছগুলো সবুজ ও সতেজ থাকে। কিন্তু শুকনো মৌসুমে দেখা দেয় পানির ব্যাপক সমস্যা। সারা এলাকা খা খা করে। গাছের সব পাতা পড়ে যায়। কিছু গাছ মরেও যায় বালির উত্তাপে। গ্রামটি এখনো দূর থেকে দেখলে মরুময় বা বালুময় মনে হয়।


তাই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে এই মরুময়তা দূর করার জন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত হয়। এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য বারসিক কলমাকান্দা রিসোর্স সেন্টার কিছু ফলের চারা সহযোগিতা করে যেমন, আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আমলকি ও জলপাই। যাতে করে প্রত্যেকটি বাড়ি একটি করে সবুজ বাড়ি হয়ে ওঠে। যখন প্রত্যেকটি বাড়ি সবুজ বাড়ি হিসেবে গড়ে ওঠবে তখন পুরো গ্রামটি একটি সবুজায়ন গ্রামে পরিণত হবে। ফলে গ্রামের মধ্যে যে মরুময়তা সেটি দূর হবে। গ্রামের পারিপার্শিক পরিবেশের মধ্যে এক ধরণের রূপান্তর ঘটবে।
এই প্রসঙ্গে লিপসন ¤্রং বলেন, ‘এ গ্রামটি এক ধরণের মরুভূমি এলাকার মত এখানে শুধু বালু আর বালু কোন কিছু রোপণ করা যায় না বর্ষাকালে যদিওবা কিছু রোপণ করা যায় কিন্ত শুকনো মৌসুমে সব গাছের পাতা পড়ে যায় গাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে একটা উপায় আছে গর্ত করে অন্যখান থেকে ভালো মাটি ও গোবর মিশিয়ে রোপণ করলে গাছ গাছালি বলেন বা শাকসব্জি সবি টিকানো যায় আর এই পদ্ধতিটি পরিক্ষিত। আমি যখন আমার বাড়ীর আশপাশে গাছ রোপণ করেছিলাম তখন আমি এভাবেই ভালো মাটি এনে রোপণ করেছিলাম। যা আজ বৃক্ষের পরিণত হয়েছে।’


সবিতা মানখিন বলেন, ‘আমি অনেক দিন যাবৎ চেষ্ট করে যাচ্ছি বালুতে শাকসব্জি ও গাছের চারা রোপণের জন্য। আমি যা জানলাম এমন বালু জমিতে কাজু বাদাম, আমলকি ও সাজনা গাছ খুবই ভালো হয় অন্যান্য গাছের চেয়ে।’
পাতলাবন গ্রামের মরুময়তা দূর করে সবুজায়ন করার জন্যই বৃক্ষরোপণ অভিযান চালানো হয়। যাতে করে এখানে মানুষসহ বিভিন্ন জীবজন্তু পশুপাখি সবার বাসযোগ্য একটি পরিবেশ তৈরি হয়। পাশপাশি চিরসবুজ একটি গ্রাম হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে।

happy wheels 2

Comments