হাওর পাহাড়ের জলবায়ু সুরক্ষায় ১১ দফা দাবি যুবদের
নেত্রকোনা থেকে অহিদুর রহমান
ধনী দেশের ভোগবিলাস ও অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশের হাওর পাহাড় ও সমতলের মানুষ দুর্যোগের মুখেমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পাহাড়ি ঢল, আগাম বন্যা, হট ইনজুরি, কোল্ড ইনজুরি, শিলাবৃষ্টি, ঘুর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট নানা দুর্যোগের জন্য মানুষের জীবন ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। উজানের মেঘালয় পাহাড় থেকে পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসে পাহাড়ি বালি। আর এই পাহাড়ি বালিতে নষ্ট হচ্ছে একরের পর একর কৃষিজমি। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব এবং হুমকিতে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। একইসাথে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে হাওরে। বছর বছর পাহাড়ি ঢল ও পাহাড়ি বালির আগ্রাসনের ফলে হাওরের সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ‘হাওর যুব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩’ এর মাধ্যমে হাওর রক্ষায় বৈশি^ক জলবায়ু তহবিল গঠনের জোর দাবি জানিয়েছে হাওরবাসী যুবসমাজ। পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড়ে অপরিকল্পিত খনন ও বনবিনাশ থামানোর দাবিও জানান তারা।
২৬ অক্টোবর নেত্রকোণার কলমাকান্দার রংছাতি ইউনিয়নের পাহাড়ি বালির আগ্রাসনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্তবর্তী চন্দ্রডিঙা গ্রামে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে এই জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এবং ৩৮টি যুব সংগঠনের জোট নেত্রকোণা সম্মিলিত যুব সমাজ যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
দিনব্যাপি এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসী কৃষক, মৎসীজীবী, আদিবাসী, যুবসহ নানা পেশাজীবী জনগণ তাদের ক্ষয়ক্ষতি এবং দাবি তুলে ধরেন। হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি ও সংস্কৃতি রক্ষায় নানা শ্লোগান সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে পাহাড়ি বালিতে বিধ্বস্ত জমিতে দাঁড়িয়ে ‘প্রকৃতি-বন্ধন’ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে হাওর, পাহাড় ও সমতলের বৈচিত্র্যময় কৃষিফসল, বিলুপ্তপ্রায় খাদ্য, জলবায়ু সহনশীল দেশী ধানের জাত প্রদর্শিত হয়। দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত ব্যতিক্রমধর্মী এই সম্মেলনে আলোচনার পাশাপাশি ছিল হাওরাঞ্চলের গান, নাটক, আদিবাসী নৃত্য ও ধামাইল নাচের ঐতিহ্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। হাওরাঞ্চলের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্মিলিতভাবে এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ি ঢল ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত বেড়েছে এবং এসব কারণে পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনও বেড়েছে। হাওরের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়, কিন্তু এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাওরবাসীকে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী ও উন্নত দেশের বিশ^নেতারা বৈশি^ক জলবায়ু তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করলেও বারবার এই অঙ্গীকার ভঙ্গ করছেন। আসন্ন দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে এই তহবিল গঠন করতে হবে। হাওরাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতিকে আমলে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বৈশি^ক জলবায়ু তহবিল হাওরাঞ্চলের জন্যও বরাদ্দ দিতে হবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে আসা যুবরা ১১টি দাবি তুলে ধরেন। এই দাবিগুলোর হলো- হাওর নীতিমালা তৈরি, হাওরের নদী, বিল খনন করা, ফসলরক্ষা বাঁধ তৈরিতে দুনীর্তিমুক্ত করা, পাহাড়ের ছড়াগুলো খনন করা, হাওরের কৃষিজমি সুরক্ষায় আলাদা নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করা, পানির সংকট নিরসনে প্রাকৃতিক জলাধার লিজ দেওয়া বন্ধ করা, যেসব কৃষকের জমি বালিতে নষ্ট হয়েছে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা, হাওর ও পাহাড়ের কৃষক ও আদিবাসি যারা জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়েছে তাদেরকে পূনঃবাসন করা, কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি বন্ধ করা; হাওর অঞ্চলের জন্য শস্যবীমা চালু করা; জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় হাওর ও পাহাড়ের যুবদেরকে যুক্ত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করা ও মূল্যায়ন করা ইত্যাদি।