কৃষি প্রতিবেশ বিদ্যা চর্চায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব
মানিকগঞ্জ থেকে ডি. কৃষিবিদ মো: মাসুদুর রহমান
মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা সুরক্ষা কমিটির সভাপতি কৃষক মো: নূরল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি মো: সানোয়ারুল হক ,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর উপস্থিতিতে বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়ের সঞ্চালনায় কর্ম এলাকার কৃষক কৃষানী, যুব, জেলার কৃষি, পরিবেশ, মৎস্য, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, খাদ্য, নিরাপদ খাদ্য, বীজ প্রত্যয়ন বিভাগের অফিসারগণ, চিকিৎসক,শিক্ষক, ভোক্তা, ক্যাবের প্রতিনিধি, শিল্পী, কবি, জেলা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ এবং বিভিন্ন স্বেচ্চসেবী ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে দিন ব্যপি কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যাভিত্তিক (এগ্রো ইকোলজি) প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষির মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি।
সংলাপকে উদ্দেশ্য করে গ্যালারীতে ৩৬ ধরনের আপনজালা উদ্ভিদ, ৮২ জাতের ধান, ২৩ জাতের বিভিন্ন মৌসুমের শাকসবজি, ৮ জাতের মসলা, ১৩ ধরনের স্থানীয় কৃষিযন্ত্রপাতি ও ৩টি প্রকাশনা উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছে। বিভিন্ন এলাকা হতে আগত কৃষকদের মধ্য থেকে ১২ জন কৃষক বোরো ও আমন মৌসুমের ৪ জাতের ধান বীজের চাহিদা জানিয়েছেন।
আলোচনায়অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সানোয়ারুল হক বলেন, ‘মহামারী করোনায় আমাদের কৃষক ভাইয়েরা ফসল উৎপাদনের কাজ চালিয়েছে। কোম্পানির কাছে কৃষক যাতে জিম্মি না হয় সেদিকে অবশ্যই আমাদের সজাগ হতে হবে। মানিকগঞ্জের অনেক সবজি ঢাকার বাজারে যাচ্ছে, আমার জানামতে বারসিক’র কারিগরি সহায়তায় বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি অনেক কৃষক উৎপাদন করছে। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট কৃষি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
সিংগাইর কর্ম এলাকার সানাইল গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন সরকার বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর আগে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শব্দটি খুবই নতুন মনে হয়েছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই শব্দের মধ্যে নিরাপদ কৃষি আর নিরাপদ খাদ্য। কৃষিপ্রতিবেশ চর্চাটি এলাকয় আমি সর্বপ্রথম আরম্ভ করি এবং আমার দেখায় আরো অনেকেই এই চর্চা করায় ফসলের উৎপাদন খরচ কমেছে। ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগে উৎপাদিত শাকসবজির বাজার চাহিদা বেড়েছে। জৈব বালাই নাশক তৈরির ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ফলে ফসলের পোক দমনে রাসায়নিক বালাই কিনতে এখন আর আগের মত বাড়তি টাকা গুণতে হয় না।’
সিংগাইর উপজেলার বাঘারচর গ্রামের নারী কৃষক নাজমা আক্তার বলেন, ‘আমরা আগে বাজার থেকে বিশেষ করে সবজি বীজ কিনতাম, কৃষি প্রতিবেশ প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর একবছর যাবৎ শাক সবজির বীজ নিজেরা রাখা শুরু করেছি, আমাদের জাংলায় (সবজি মাচায় ) পোকামাকড় আগের চেয়ে কম লাগে। গত বছর আলুর মড়ক রোগে ও চালকুমড়ার পচন রোগে বর্দোমিক্সার দিয়ে উপকার পেয়েছি (ছত্রাকের আক্রমণ রোধ সম্ভব হয়েছিল)। আশা করি বারসিক এবং আমরা একত্রে মিলে জৈব কৃষির চর্চা আরো বাড়াতে পারবো ।
ড: সাইদুস সাকলাইন (অধ্যাপক, উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগ, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ,মানিকগঞ্জ ) বলেন, ‘নিরাপদ খাবারের খুবই অভাব। সবজি ও মাঠ ফসল উৎপাদনে তীব্র মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে যা গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বর্তমানে অনির্বাচিত আগাছা নাশক দিয়ে ভেষজসহ সকল ধরনের উদ্ভিদ ধ্বংস করা হচ্ছে। আজকের সংলাপ সময়োপযোগি বলে মনে করছি, প্রতিবেশ রক্ষায় এখানে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের উদ্যোগ কামনা করছি।’
প্রাণপ্রকৃতি ও নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা করেন মানিকগঞ্জের বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও স্যাকের নির্বাহী পরিচালক এ্যাড.দীপক কুমার ঘোষ, বীরমুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম, ক্যাব মানিকগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এবিএম শামসুন্নবী তুলিপ, ইপি সদস্য সেলিনা বেগম,কৃষক গবেষক ইব্রাহিম মিয়া, জেলা কৃষক গবেষক ফোরামের আহবায়ক মাসুদ বিশ^াস, তরুণ উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম, জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির উপদেষ্ট্ ামো: শহিদ মোল্লা, কৃষক রফিকুল ইসলাম, সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার আ: মোন্নাফ খান, অধ্যাপক আবুবকর সিদ্দিক মোল্লা, মিজানুর রহমান হৃদয়, দুলাল বিশ^াস প্রমুখ