বসতভিটায় সবজি চাষে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কমলা রানী
সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পোড়াকাটলা গ্রামের কমলা রানীর (৫০) বসবাস। বসতভিটায় সবজি চাষ করে পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন তিনি। কমলা রানীর বিয়ে হয়েছিলো একই গ্রামের নিমাই গাইনের (৫৮) সাথে প্রায় ১৪ বছর বয়সে। নিমাই গাইন একজন কৃষক। নিমাই গাইনের পিতার জায়গা জমি না থাকায় কমলা রানীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন। শ্বশুর বাড়িতে থেকেই নিমাই গাইনের কৃষি কাজ করতো অন্যের বাড়িতে। প্রায় এক-দুই বছরের মধ্যে কমলা-নিমাই দম্পতির একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পর্যায়ক্রমে পাঁচটি কন্যাসন্তান ও একটি ছেলে সন্তান হয় কমলা-নিমাই দম্পতির।
পরবর্তীতে সন্তানদের ভরণপোষণ যোগাতে একা নিমাই গাইন কৃষি কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খায়। ঠিক তখনই কমলা রানী সন্তানদের দিকে তাকিয়ে নিজ বাপের বসতভিটায় প্রায় দশ শতক জায়গায় শাক সবজি চাষ শুরু করেন। সেই শাকসবজি চাষ থেকে কিছু অংশ পরিবারের খাদ্য হিসাবে এবং কিছু অংশ বিক্রি করে সন্তানদের পিছনে ব্যয় করে খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে লেখাপড়া শিখিয়ে মেয়ে পাঁচজনকে বিয়ে দিয়েছেন।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকির দিক থেকে কোন অংশে কম নয়। তার মধ্যে পোড়াকাটলা গ্রাম অন্যতম। প্রতিনিয়ন দূর্যোগের কারণে লবণ পানি প্রবেশ করে মাটি,পানিকে লবণাক্ততা করে দেয়। ফলে শাকসবজি চাষ করতে খুবই হিমশিম খেতে হয় কমলা রানীর। যদিও কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হয়েও নিজের জ্ঞানটুকু কাজে লাগিয়ে তিনি শাকসবজি চাষ করতেন।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে বারসিক’র বাস্তবায়নে নেটজ (পার্টনারশিপ পর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস) এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পোড়াকাটলা গ্রামে গাংচিল দলের সদস্য হন কমলা রানী। সদস্য হওয়ার পরেই দুই দিনব্যাপি জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। প্রশিক্ষণের পরে চাহিদা অনুযায়ী কমলা রানীকে নিজ বাড়িতে ক্ষুদ্র ব্যবসা করার জন্য চাউল-কুড়া এবং হাঁসমুরগি, গাছের চারা, বীজসহ মোট তের হাজার পাঁচশত টাকার সম্পদ দেওয়া হয় প্রকল্প থেকে।
পরবর্তীতে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে আরো একটি আয়ের সুযোগ হয় কমলা রানীর। একই সাথে নিয়মিত দলে এসে আলোচনা, পরামর্শ, প্রশিক্ষণের ফলে আগের তুলনায় আরো ভালো করে বসতভিটায় শাকসবজি চাষ শুরু করছেন। কমলা রানীর বসতভিটায় বর্তমানে বেগুন,ফুলকপি,আলু,ওলকুপি,মুলা,লালশাক, পালনশাক, লালকপি, পুইশাক, পেঁয়াজ, সরিষা, সীম এবং ফলের মধ্যে রয়েছে কলা, ছবেদা, আম, জামরুল, কুল, নারকেল, ডালিম, লেবু, তেঁতুল খেজুর ইত্যাদি। তিনি জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেন এবং চাউল-কুড়ার ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে বসতভিটার কিছু অংশ উচু করেন। বছরে প্রায় দুই মৌসুমে ৬-৭ মাস তার বাড়িতে শাকসবজি চাষ করছেন। সেই শাকসবজি পরিবারে খাওয়ার পাশাপাশি প্রায় আটশত থেকে নয়শত টাকা বিক্রি করেন প্রতিমাসে এবং প্রতিমাসে খাদ্য হিসাবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়শত টাকার শাকসবজি খাদ্য হিসাবে খান কমলা রানী।
কমলা রানীর ছোট ছেলে বিশ্বনাথ গাইন (১৬) ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। কমলা রানী বলেন, ‘বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ পেয়ে আগের তুলনায় শাকসবজি উৎপাদন বেশি হচ্ছে। আমি এমনি আরো ভালোভাবে শাকসবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সবজি বিক্রি করে আয় করতে পারছি। আমাদের আয় থেকে একমাত্র ছেলেটিকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই।’