গরু পালনের ইচ্ছা পূরণ হল মারুফা বেগমের
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল আলীম
গরু পালনের ইচ্ছা পূরণ হল মারুফা বেগমের। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল একটি দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত নিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে আছেন এই অঞ্চলের নারী ও পুরুষ। তবে পুরুষদের চেয়ে নারিদের প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি। পরিবারের সকল দায়ভার যেন তাদের। এমনই জীবন সংগ্রামে টিকে আছেন শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের মারুফা বেগম।
খুব ছোট বেলা থেকে অন্যের বাড়িতে শিশু দেখাশোনার কাজ করে নিজের বাবা মাকে সাহায্য করতেন। পড়ালেখা মাত্র ২য় শ্রেণী সমাপ্ত হয়েছিল। অন্যের বাড়িতে শিশু দেখাশোনা করার কারণে আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু অনাদর আর অবহেলার কারণে কোথায় স্থায়ী হতে পারেননি। সর্বশেষ মাত্র ১২ বছর বয়সে হরিনগরের রিপনের সাথে বিয়ে হয় মারুফার। তখন মারুফা নিজেই জানতেন না বিয়ে কি? শ্বশুর বাড়ির একই অবস্থা অভাব অনটন পিছু ছাড়েনা। স্বামীর সাথে হরিনগরের বাজার সংলগ্ন খাস জমিতে বাস করেন মারুফা ও রিপন। তাই নিজস্ব সম্পদ বলতে কিছুই নেই তাদের। ২ বছরের মধ্যে মারুফার একটি সন্তান হয় কিন্তু মারা যায়, পরবর্তীতে ১৮ মাসের ব্যবধানে আবারও একটি সন্তান জন্ম দেয় কিন্তু সেই সন্তানও মারা যায়। অবশেষে ১৮ মাস পর ৩য় পুত্র সন্তান জন্ম দেন মারুফা। একটি পুত্র সন্তানই তার স্বপ্ন। পরবর্তিতে আরো একটি প্রতিবন্ধী ছেলে জন্ম হয় এবং সেই ছেলেও মারা যায়। এভাবে অনেক অসহায় হয়ে পড়েন মারুফা বেগম। স্বামী অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে স্ত্রী সন্তানকে রেখে ঢাকায় চলে যায় এবং রিকশা চালিয়ে আয় করতে থাকেন।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পরিবেশ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী গেওয়া দলের সদস্য হন মারুফা বেগম। প্রকল্পের সহযোগিতা হিসেবে ২টি বড় ও ২টি বাচ্চা ছাগল, হাঁস মুরগি, বীজ ও ফলের গাছ নেন। খুব যতœ করে লালন পালন করেন দুই বছর। তিনি উক্ত ছাগল থেকে ৫টি ছাগল বিক্রি করেন ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে এবং নিজের জমানো ৭০০০ টাকা দিয়ে মোট ৪২০০০ টাকা দিয়ে একটি গরু ক্রয় করেন। তার এখনো কয়েকটি ছাগলের বাচ্চা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সম্পদের ঠিকঠাক ব্যবহার করলে খুব অল্প থেকে সুন্দর কিছু করা যায়।’ তিনি ১২ হাজার টাকা থেকে ৩ বছরে ৪৫ হাজার টাকার সম্পদ তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বারসিক’র সহযোগিতা না থাকলে এটা সম্ভব হতনা। তাদের প্রতিনিয়ত খোজ খবর নেওয়া ও পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে।’