হাওরঞ্চলের প্রাণ ও প্রকৃতিকে তার মতো করেই সংরক্ষণ করতে হবে
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দূর্যোগে পাহাড় ও হাওরঞ্চলের প্রতিবেশ ও প্রানবৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। সম্প্রতি অকাল বন্যায় ধান ও ধান গাছ পচে এবং জমিতে ব্যবহার করা কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণে পানি দূষিত হয়েছে, পানিতে সৃষ্টি হয়েছে এমোনিয়া গ্যাসের। সাপ, ব্যাঙ, মাছ, অন্যান্য পোঁকা মাকর, হাঁসসহ হাওরে প্রচুর মাছও মারা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৫ সদস্যের পর্যবেক্ষক দল হাওরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, “হাওরের পানি শোধন করতে শুধু কিছু চুন বা জিওলাইট ছিটালেই হবে না। এটা প্রাকৃতিকভাবেই হতে হবে। প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট দূষিত পদার্থ বিশুদ্ধ করার সর্বোৎকৃষ্ট উপায় প্রকৃতিই। একটি প্রাণের বেঁচে থাকার অবলম্বন আরেকটি প্রাণ ও প্রকৃতি।”
প্রতিটি প্রাণের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে কলমাকান্দা এলাকায় বিশেষভাবে হাওর ও পাহাড়ের প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বারসিক ও শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির যৌথ উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ২২ মে প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উদ্যাপন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “প্রাণবৈচিত্র্য ও স্থায়িত্বশীল পর্যটন”।
অনুষ্ঠানে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, যুব, কিশোর কিশোরী, কৃষক, শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কলমাকান্দা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী অনন্যা আক্তার ধারণাপত্র পাঠ করেন। আলোচনায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, “এই প্রকৃতিতে যত প্রাণ আছে সবই আমাদের প্রয়োজনীয়। কিন্তু অনেক ছোট ছোট পোকামাকড় আছে যেগুলো আমরা প্রয়োজন মনে করিনা এবং সেগুলো মেরেও ফেলি। গাছ কেটে ফেলি কিন্তু আর গাছ রোপণ করিনা। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে, প্রাণবৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।”
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিনাত জাহান বর্ণালী বলেন, “বর্তমানে হাওরের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে হাওরের সব ধান পচে পানি দূষিত হয়ে গেছে। এর ফলে মাছসহ জলাশয়ের প্রত্যেকটি প্রাণির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই মাছসহ জলাশয়ের সব প্রাণীকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও মাছ সংরক্ষণের জন্য খনা জাল ও কারেন্ট জাল ব্যবহার বন্ধ করার জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে। তাহলে মাছের বংশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।”
বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা রবিনসন খান বলেন, “প্রকৃতির প্রতিটি সৃষ্টিই আমাদের প্রয়োজনে। তাই এগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য।” ডিএসকে-এর প্রতিনিধি মলি দত্ত বলেন, “প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাচঁব। পশু পাখি, পোকামাড়ক, মাছ, গাছ, প্রকৃতি সব আমাদের। তাই সংরক্ষণ করার দায়িত্বও আমাদের।”
উল্লেখ্য গত ২১ মে ২০১৭ কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের চিনাহালা গ্রামে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে নবীন ও প্রবীণের শৈশব স্মৃতিকথন অনুষ্ঠিত হয়।