প্রকৃতি রক্ষায় নেত্রকোনার পেশাজীবীদের শপথ
নেত্রকোনা থেকে মো অহিদুর রহমান
আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রকৃতি, পরিবেশের বিপন্নতা ঘুচাতে, পরিবেশের সহিংসতা প্রতিরোধে কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, মাঝি, কবিরাজ, কাঠুরে, বাদক, রাখাল, গোয়ালা, পালকিবাহক, হরিজন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটিরশিল্পী, শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, উকিলসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রকৃতি সুরক্ষায় শপথ নিয়েছে। গতকাল (৫ জুন) আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসের উপলক্ষে নেত্রকোনা সদর উপজেলার হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তারা এই শপথ গ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল বারসিক’র উদ্যোগে নেত্রকোনা সদর উপজেলায় সংলাপ আয়োজন করা হয়। সংলাপে কৃষক পাঠাগারের ব্যবস্থাপক আ: রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আ: খালেক। সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, মাঝি, কবিরাজ, কাঠুরে, বাদক, রাখাল, গোয়ালা, পালকি বাহক, হরিজন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটিরশিল্পী, শিল্পী, শিক্ষক, চিকিৎসক, উকিল, আদিবাসী, সাংবাদিকসহ নানা পেশাবৈচিত্র্যর মানুষ এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
সংলাপে প্রধান অতিথির ভাষণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “মানুষের যুগ যুগের পরিশ্রমের ফলে টিকে আছে এই পৃথিবী। সকলকে নিয়ে, সকলের পেশা রেখে, সকল প্রকৃতির উপাদান ভালো রেখে পরিবেশকে ভালো রাখতে হবে। বারসিক সেই কাজে আছে, আমরাও তাদের সাথে আছি।” অন্যদিকে কৃষক সায়েদ আহমেদ খান বাচ্চু বলেন, “আামদের পাশেই নদী ছিল। নদীতে গোসল, মাছ ধরা, নৌকা দৌড়ানো, কৃষি কাজে পানি ব্যবহার ও সাতাঁর কাটতাম। কিন্তু আমার পাশের নদী আজ বিলুপ্ত।” আদিবাসী মতি ঘ্রাগা বলেন, “পাহাড় আমাদের খাদ্য ও সংস্কৃতির উৎস। সেই পাহাড় আজ বিবর্ণ, বিপন্ন। পাহাড় আর আমাদের টানেনা।”
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবসের উপলক্ষে অপর একটি পৃথক অনুষ্ঠানে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলা চত্বরে র্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আটপাড়া উপজেলা শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি আ. হামিল খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আটপাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, মাঝি, কবিরাজ, কাঠুরে, রাখাল, হরিজন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটিরশিল্পী, শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, যুবক, উকিল, সাংবাদিকসহ নান পেশাবৈচিত্র্যের মানুষ।
আলোচনা সভায় তাই কৃষাণী নাসরিন বলেন, “ছোটবেলায় নদীতে সাতার কাটতাম, গাছে উঠতাম, জাম পারতাম, ঘুরি উড়াতাম। এখন কিছুই করতে পারে না আমাদের শিশুরা। তাদের শৈশব চুরি হয়ে গেছে। তারা প্রকৃতি চিনে না, গাছ চিনেনা।” অনুষ্ঠানে যুব ও জেলে সংগঠনের সদস্যরা নদী, মাছ, মৌমাছি, প্রজাপতি, ব্যাঙ, শামুক, পাহাড়, গাছ, মাছ সেজে জানিয়ে দেন আমরাই পরিবেশের রক্ষা করি।
পরিবেশ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় নানান পেশাজীবী মানুষের অবদান তুলে ধরা হয় আলোচনা সভায়। পেশাবৈচিত্র্যের মানুষগুলোই পেশা পরিবেশ ও প্রতিবেশকে টিকিয়ে রেখেছেন। যত পেশা বিলুপ্ত হচ্ছে মানুষ ততো বেশি প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। মানুষ যত প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে তত মানুষ বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন ও জীবিকা। তাই মানুষের প্রয়োজনেই নদী, নালা, খাল, বিল, হাওর, পাহাড়, বন, পুকুর, সবুজ প্রান্তরকে রক্ষা করা প্রয়োজন।