সাম্প্রতিক পোস্ট

বাড়ির উঠোন হতে পারে আয়ের ভালো উৎস

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু

অনাদিকাল থেকেই মানুষ ফসল উৎপাদনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নগরায়ণ, টপসয়েল কমে যাওয়া, অপরিকল্পিত পুকুর খননসহ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ভাবে কৃষিজমি কমে যাওয়ায় মানুষ পতিত ভূমি, রাস্তার পাশর্^দেশ এমনকি বাড়ির উঠোনও ব্যবহার করে ফল ফসল সবজি চাষের আওতায় আনছেন। বাড়ির উঠোনে অনেকে শাক সবজির আবাদ করছেন যা বাড়ির মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাচ্ছে। পাশাপাশি উদ্বৃত্ত অংশ বিক্রি করে অনেকে বাড়তি আয়ও করছেন।

muttalib-2

পাবনার চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের দোলং গ্রামের কৃষক আব্দুল মুত্তালিব (৫০) তার বাড়ির সামনের দশ শতাংশ উঠোনে শাকসবজি ফল চাষ করে প্রতিমাসে গড়ে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা আয় করছেন। উঠোনে সবজি চাষে তার সফলতা দেখে অনেকে বাড়ির উঠোনে সবজি চাষে উৎসাহী হচ্ছেন।

muttalib-1

আব্দুল মুত্তালিব বলেন, “আমার নিজস্ব ফসলী জমি তিন বিঘা। অন্যের তিন বিঘা জমি বর্গা চাষ করি। ছেলের আশায় একে এক সাতটি মেয়ে হয়ে যায়। সাত মেয়ে এক ছেলে আমার। অনেক কষ্টে শিষ্টে যৌতুক দিয়ে বড় তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা শ^শুড় বাড়ি থাকে। এখন চার মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী ও আমি সাতজন একত্রে আছি। মাসে অন্তত নয় হাজার টাকা সংসার খরচ। সংসার চালাতে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করাতে অনেক টাকা খরচ হয় যা উপার্জন করা আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। জমিতে টাকা খরচ করে যে ফসল ফলাই তাতে পেটের ভাত কোন রকমে হয়। কিন্তু এত বড় সংসার চালাতে হিম শিম খেতে হয় আমাকে।” তিনি আরও বলেন, “তাই ২৬ শতাংশ বাড়ির সামনের দশ শতাংশ উঠোনে সবজি চাষ শুরু করি। পালাক্রমে লাল শাক, সবুজ শাক, বেগুন, মূলা, পুই শাকসহ অন্যান্য সবজি জন্মাই। টাটকা সবজি খাই। উদ্বৃত্ত অংশ বিক্রি করি। এছাড়া হলুদ, মরিচ, লেবু ও ঁেপপে গাছও আছে। পরিকল্পিতভাবে কয়েকটি লিচু গাছ লাগিয়েছি। লিচু গাছে লিচু আসতে শুরু করেছে। এখন ১০ শতাংশ উঠানের প্রায় অর্ধেকটায় পটল চাষ করেছি। কঞ্চি, জিআই তার ও লাইলন সুতা দিয়ে উঁচু মাচা করে দিয়েছি। দু’দিন পর পর পর তিন চারশ টাকার পটল বিক্রি করছি। ফাল্গুন মাস থেকে পটল বিক্রি শুরু করেছি। ৯০ টাকা কেজি পর্যন্ত পটল বিক্রি করেছি। এখন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আগামি অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত পটল বিক্রি করব আশা করছি। উঠোনে সবজি চাষ করে মাসে গড়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা উপার্জন করছি।”

muttalib-3

চাটমোহর-ছাইকোলা সড়কের পাশে বাড়ি আব্দুল মুত্তালিবের। কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রচন্ড যত্ন নেন শাক সবজির। যে চার মেয়ে তার সাথে আছেন তাদের মধ্যে মিম এবছর এস এসসি পাশ করল। জিম দ্বিতীয় শ্রেণীতে, মরিয়ম প্রথম শ্রেণীতে এবং মেঘলা প্রাক প্রাথমিক (শিশু শ্রেণীতে) পড়ছে। ছেলে ইয়াছিনের বয়স ২ বছর। পড়ালেখা না জানায়, সচেতনতার অভাবে অধিক সন্তান নেওয়ার কুফল সম্পর্কে জানা ছিল না আব্দুল মুত্তালিবের। এখন তিনি বয়সের মধ্যভাগ পেরিয়ে গেছেন। সংসার পরিচালনা করতে গিয়ে অত্যাধিক কষ্ট করতে হচ্ছে তাকে। এতদসত্বেও তার বাড়ির উঠোনে সবজি চাষ নজর কাড়ছে মানুষের। একটু চেষ্টা করলেই পরিশ্রম করলেই যে বাড়ির উঠোন অথবা পড়ে থাকা জায়গায় সবজি চাষ করে লাভবান হওয়া যায় মুত্তালিব তা দেখিয়ে দিচ্ছেন আমাদের। বাড়ির উঠোনে সবজি চাষ একদিকে পরিবারের চাহিদা মেটায় অন্য দিকে আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

happy wheels 2

Comments