জামাই আদরের উৎসব জামাইষষ্ঠী
রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার
আজ জামাইষষ্ঠী। এটি মূলত: জামাই আদারের উৎসব হলেও সন্তানদের মঙ্গল কামনায় বাড়ির এই পার্বণটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যেমন গুরুত্ব বহন করে তেমনি এর প্রভাব বাঙালি জীবনেও সুস্পষ্ট। জেলার তানোর উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের শতাধিক স্থানে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বট অথবা পাইকোড় গাছের নিচে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজাকে কেন্দ্র করে পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে আনন্দ উৎসব। বিশেষ করে এই জামাইষষ্ঠীতে নতুন জামাইদের চলে আপ্যায়নের মহোৎসব। ষষ্ঠীপূজার পর জামাইদের হাতে হলুদমাখা মঙ্গলসুতো পরিয়ে দেয়া হয়। তারপর চলে খাওয়ার উৎসব। খাওয়ার মধ্যে থাকে- দই, চিড়া, কলা, দুধ, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, খেজুর, পেয়ারা, তরমুজ ও নানা রকম মিষ্টিসহ জৈষ্ঠ্যের বিভিন্ন ফলমূল।
এ নিয়ে তানোর পৌর এলাকার গোল্লাপাড়া গ্রামের পুরোহিত শ্রী সনজিৎ কুমারী অধিকারী ও আকচা গ্রামের পুরোহিত শ্রী বিশ^জিৎ কুমার চৌধুরী জানান, ষষ্ঠীপূজায় বাড়ির নারীরা সকাল থেকে না খেয়ে উপোস থাকেন। জৈষ্ঠ্যের বিভিন্ন ফলমূল ডালাই সাজিয়ে ও বাহারি সাজে নতুন জামাইসহ মেয়েরা ষষ্ঠীপূজা স্থানে যান। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এ লৌকিক আচারটি পালন করা হয় বলেই এর নাম জামাইষষ্ঠী। অবশ্য এর আরেকটি নাম হচ্ছে অরণ্যষষ্ঠী। তবে এবার পূজা হচ্ছে আষাঢ়ে। পূজা হয়ে থাকে ষষ্ঠীদেবীরও। ষষ্ঠীদেবী মাতৃত্বের প্রতীক। সে কারণে ষষ্ঠী প্রতিমাতে দেখা যায় তিনি কোলে সন্তান ধারণ করে আছেন। ষষ্ঠী মাতার কাছে জামাইদের জন্য দীর্ঘায়ূ কামনা করা হয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, এই পার্বণ মূলত পরিবেশ রক্ষার্থে গাছকে দেবতা বিশ্বাসে পূজা করা হয়। কেননা এ আয়োজনে বিবিধ গাছের ডাল যেমন দরকার হয় তেমনি এ দিনে সনাতন পরিবারে থাকে বাহারি মৌসুমি ফল। কিন্তু এখন সময়ের পরিক্রমায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এ পার্বণের মূল উদ্দেশ্য, শতবর্ষী ষষ্ঠী গাছ আর পূজার জন্য পাওয়া যায় না। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি, যখন আম-কাঁঠালের গন্ধে চারদিক সুবাসিত, তখনই জামাইষষ্ঠী ব্রতটি হওয়ায় এর হাওয়া ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলে গ্রামীণ সাধারণ জনজীবনেও। এ সময় শ্বশুড় বাড়িতে জামাইরা নিমন্ত্রিত হন। বাড়িতে বাড়িতে চলে ‘জামাই আদরের’ উৎসব।