বিভিন্ন মাধ্যমে গণসচেতনতা তৈরি করছেন রাজশাহীর তরুণরা
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
বহুবৈচিত্র্যে ভরপুর এবং মিশ্র জাতি গোষ্ঠীর দ্বারা শাসিত ছিলো রাজশাহী তথা বরেন্দ্র নামক জনপদটি। রাজশাহীর নামের উৎপত্তি ইতিহাসই তার সাক্ষী। এই জনপদটিতে একসময় শাসক হিসেবে হিন্দু, মুসলিম, রাজা, জমিদার শাসিত ছিলো বলে নামকরণ হয়েছে রাজশাহী। ঐতিহাসিকদের মতে, হিন্দু রাজ আর ফরাসী শাহী শব্দের সমন্বয়ে সে সময়ে রাজশাহী নামের উৎপত্তি হয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম গঙ্গা তথা পদ্মা নদী এই জনপদের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে। সঙ্গত কারণেই এই অঞ্চলের পরিবেশ প্রতিবেশ ছিলো বৈচিত্র্যে ভরপুর।
এখানে হাজারো ধরনের পাখির দেখা মিলতো, দেখা যেতো নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। বহুজাতির সমন্বয়ে এর সংস্কৃতিও ছিলো এই উপমহাদেশের মধ্যে অনন্যময়। কিন্তু দেশ (ভারতবর্ষ) বিভাগের পর থেকে নানা রাজনৈতিক পালাবদলে সেই সময়ের শাসক গোষ্ঠী এই অঞ্চলের সংস্কৃতি আর প্রাণপ্রকৃতিকে না বোঝার কারণে ব্যাপকভাবে ধ্বংস লীলা বয়ে গেছে। আজওও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নানা কারনেই এই অঞ্চলকে বিবেচনায় উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় নানামূখী সংকটের শিকার হচ্ছে জনপদটি। বর্তমান সময়ে যদিও অনেক ক্ষতির পর বিভিন্ন উপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু র্দূভাগ্যের বিষয় উক্ত সময়ে বৈরী নীতি নিধারণে আমরা হারিয়েছি অনেক কিছু। হারিয়েছি আমাদের অনেক প্রাণবৈচিত্র্য আর উপযোগী লোক সংস্কৃতি।
সময়ের পরিক্রমায় আর নানা সংকটের সাথে লড়াই করে এই অঞ্চলের মানুষ জানতে চায় তার নিজস্ব স্বকীয়তা। আর সেই সংকটময় পরিস্থির শিকার হওেচ্ছ বর্তমান প্রজন্ম। কারণ তারাই বেশি এই ভুক্ত ভোগীর শিকার হচ্ছে। একদিকে যেমন ভয়ংকরভাবে পানি সংকেটর শিকার অন্যদিকে নিজস্ব সংস্কৃতি বিমুখতায় সহিংতা বৃদ্ধিও পরিস্থিতির শিকার। তাই তারুণ্য জানতে চায় নিজস্ব অতীত সম্পদের কথা, বুঝতে চায় তার নিজের প্রাণ প্রকৃতি আর বহুবৈচিত্র্য সংস্কৃতির কথা। দিনে দিনে নানা আলোচনা আর কার্যক্রমে নবীন প্রবীণ সমন্বয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একদল সচেতন তরুণগোষ্ঠী । নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও তারা নিজেরা সচেতন হচ্ছে নিজের ঐতিহ্য এবং প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায়, একই সাথে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারাভিযানসহ নানা কর্মউদ্যোগ গ্রহণ করছে।
তেমনি একটি তরুণ সংগঠন ‘ইয়্যাস’ (ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ)। শুরুটা ২০১৫ সালে। সামাজিক বৈষম্য এবং প্রাণ, প্রকৃতির প্রতি সহিংসতার চিত্র দেখে থেমে থাকেনি এই সংগঠনের তরুণরা। সংঘঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তরুণ শামীউল আলীম শাওন বলেন, “২০১৫ সালের ১৬ জুলাই বহুল আলোচিত শিশু রাজন ও রাকিব হত্যাকারীর সুষ্টু বিচারের দাবিতে নগরীতে মানবন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা একত্রিত হয়েছি।” তিনি আরো বলেন, “আমরা পরিচ্ছন্ন ও সবুজ শহর, নিরাপদ খাদ্য, নিষিদ্ধ পলিথিন মুক্ত বরেন্দ্র অঞ্চল, নিরাপদ সড়ক, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান, প্রাণপ্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ ও নিজস্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতি সুরক্ষায় কাজ করছি।”
এই সংগঠনের তরুণরা সমমনা অন্যান্য সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি এবং উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেন। দূষণমুক্ত রাজশাহীসহ সবুজ শহর রাজশাহীর উন্নয়নে “আমার শহর” প্রচারাভিযানে নিয়মিত নগরের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। গাছ না থাকলে পাখি যে থাকবেনা, একই সাথে গাছ না থাকলে যে সবুজ শহর হবে না, আবার পরিবেশ এবং স্থানীয় সংকটগুলো নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে গণসচেতনতাসহ তরুণরা নিজেই কাজ করছেন। এসব বিষয়গুলো নিয়ে তারা স্থানীয় গণমাধ্যম তথা বরেন্দ্র টিভি, কমিউনিটি ভিত্তিক রেডিওসহ নানা পত্রিকার মাধ্যমে গণসচেতনতা প্রচার করছেন।