প্রতিটি বাড়িতে তাল বীজ রোপণ করি
খাদিজা আক্তার লিটা, নেত্রকোনা থেকে
নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার মইনপুর গ্রামের ‘ধলাইপাড়ের আমরা ক’জন সংগঠন’র উদ্যোগে গত ১৩ অক্টোবর ‘দূর্যোগ ও প্রশমন’ দিবস উদ্যাপন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা ও তাল বীজ রোপণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্যসহ গ্রামের মোট ৩০ জন নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করে।
দিবসটি উপলক্ষে আলোচনায় সংগঠনের নেত্রী মামনি আক্তার বলেন, “আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়, দূর্যোগের পরিমাণ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ছাড়াও মানব সৃষ্ট কারণে দূর্যোগ সংগঠিত হচ্ছে। মানুষ বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য এবং অধিক মূনাফা অর্জনের জন্য বন ধ্বংস করে ও কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প কারখানা স্থাপন করছে।’
আলোচনায় জানানো হয়, জীবাশ্ম জালানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ফলে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাতাস হচ্ছে গরম, ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। প্রকৃতি মাঝে মধ্যেই বিরূপ আচরণ করছে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, জলোচ্ছাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে বিগত কয়েক বছর যাবত যুক্ত হয়েছে বজ্রপাতের পরিমাণ। আলোচনায় বক্তারা জানান, প্রতিবছর কয়েকশত লোক বজ্রপাতে মারা যাচ্ছে। এসব প্রকৃতিক দূর্যোগের ফলে দেশের মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে সাংগঠনিক বা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। সকলকে প্রতিবছর ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। বিশেষভাবে বজ্রপাত প্রতিরোধে আমাদেরকে তাল গাছসহ উঁচু হয় এমন গাছের চারা রোপণ করতে হবে।’
মামনি আক্তার বলেন, ‘বজ্রপাত সমস্যা মোকাবেলায় সংগঠনের সকল সদস্য বাড়ি বাড়ি থেকে তাল বীজ সংগ্রহ করি এবং নিজেরা গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সামনে খোলা স্থানে সেগুলো রোপণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমি ধন্যবাদ জানাই বারসিককে আমাদের এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য। আমরা চাই নতুন প্রজন্মের সবাই নিজ নিজ বাড়িতে অন্তত একটি করের তাজ বীজ ও ফলজ গাছের চারা রোপণ করুক। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে জলবায়ু পরিবর্তনে ফলে সৃষ্টি প্রাকৃতিক দূর্যোগ হ্রাসে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে।”
বারসিক’র কর্মী খাদিজা আক্তার লিটা অংশগ্রহণকারীদেরকে নিজ নিজ বাড়ি পতিত জমিতে সাধ্যমত ফলজ গাছের চারা রোপণ, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী চুলা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন নিঃস্বরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দূর্যোগ হ্রাসে অবদান রাখার আহবান জানান। আলোচনা শেষে দূর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষভাবে বজ্রপাত প্রতিরোধের লক্ষ্যে সংগঠনের উদ্যোগে গ্রামের ১০০টি পরিবারের মধ্যে ১০৫টি তালের বীজ রোপণ করা হয়। তাল বীজ রোপণের এ উদ্যোগ কাজের উদ্বোধন করেন গ্রামের বিশেষভাবে সক্ষম এক কিশোরী ফারিয়া আক্তার।
দূর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘ধলাইপাড়ের আমরা ক’জন সংগঠন’র উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। দেশের প্রতিটি গ্রামে এধরণের সংগঠন গড়ে ওঠলে এবং এধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হবে। হ্রাস পাবে অপরিকল্পিত বৃক্ষ নিধন, জ্বালানি ব্যবহারে জনগোষ্ঠী সচেতন হবে এবং বৃদ্ধি পাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির। হ্রাস পাবে প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরিমাণ ও রক্ষা পাবে আমাদের জানমাল।