আমাদের প্রত্যেকের মাতৃভাষাকে চর্চা করা উচিত
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দায় পালন করা হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করে বারসিক’র উদ্যোগে নলছাপ্রা উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মাতৃভাষা উপর রচনা প্রতিযোগিতা, জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতা, শুদ্ধ বানান প্রতিযোগিতা ও মাতৃভাষা উপর কুইজ প্রতিযোগিতা।
মাতৃভাষার উপর রচনা প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হয় একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। মাতৃভাষা এর উপর রচনা লেখার জন্য আহ্বান করা হয় দুই ভাষাভাষীদের মধ্যে। একদিকে বাঙালিরা বাংলা মাতৃভাষার উপর রচনা লিখেন। আবার অন্যদিকে বাংলা হরফে গারো আদিবাসীরাও গারো ভাষায় মাতৃভাষার উপর রচনা লিখেন। রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী। যার মধ্যে গারো ছিল ৭ জন ও বাঙালি ২১ জন। প্রতিযোগিতাটি করা হয় দুটি ভাগে এক বাঙালি দুই গারো আদিবাসীর মধ্যে। এমন ধরণের রচনা প্রতিযোগিতা করার উদ্দেশ্য ছিল মাতৃভাষাকে ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ নিজ নিজ ভাষায় কিভাবে উপস্থাপন করে তা জানা।
বাংলাদেশের গারো হাজং আদিবাসীরা দিন দিন তাদের মাতৃভাষা থেকে সরে অন্যভাষার দিকে ঝুঁকছে। মাতৃভাষার চর্চার যাতে চলমান থাকে সেজন্যও এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মাতৃভাষা দিবসে নিজ নিজ মাতৃভাষাকে চর্চা ও ভালোবাসতে অনুপ্রেরণা দান করাও ছিল অন্য আরেকটি কারণ। চর্চা না থাকার কারণে রচনা লিখতে গিয়ে গারো আদিবাসীরা খুবই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল বলে জানান। এসময় মাতৃভাষা চর্চা বিষয়ে প্রধান শিক্ষীকা কপতী ঘাগ্রা বলেন, ‘আমাদের উচিত আমাদের প্রত্যেকের মাতৃভাষাকে চর্চা করা, যাদি না করি তবে আমাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাবে।’ এছাড়াও তিনি সবাইকে মাতৃভাষাকে চর্চা ও সম্মান করার আহ্বান জানান।
জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতা করা হয় বাংলা ভাষাভাষী বনাম গারো ভাষাভাষীর মধ্যে। এমন ধরণের প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি যাদের বাংলা হচ্ছে মাতৃভাষা তারা জাতীয় সংগীতটি কি শুদ্ধভাবে গাইতে পারছে কিনা? নাকি গারো আদিবাসী যাদের কাছে বাংলা হচ্ছে দ্বিতীয় ভাষা তারা কতটুকু জাতীয় ভাষা শুদ্ধভাবে গাইতে পারে তা জানা। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী এর সংগীত শিক্ষক মি. প্রবীর কুমার। তিনি অবশেষে ফলাফল ঘোষণায় বলেন, ‘জাতীয় সংগীতটি শুদ্ধভাবে গাইতে পেরেছে গারো আদিবাসীদের দল। আমি একটা বিষয়ের জন্য খুবই আশ্চর্য হয়েছি যে, গারো আদিবাসীরা যেভাবে গানটি পরিবেশন করেছে তা খুবই প্রশংসনীয়।’
বইমেলা
কলমাকান্দা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত, উদয় যুব সংগঠন ও বারসিক কলমাকান্দা রিসোর্স সেন্টার এর সহযোগিতায় কলমাকান্দায় তৃতীয়বারের মত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হলো ২১শে বইমেলা। ২১শে বই মেলাটির শুভ উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন। এই প্রসঙ্গে উদয় যুব সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবারের বইমেলায় অনেক দর্শনার্থী ছিলেন। বইমেলা পরিদর্শনে আসেন কলমাকান্দা-দূর্গাপুর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বাবু মানু মজুমদার ও তাঁর পরিবারবর্গ।’ গতবারের তুলনায় এবছরের বইমেলায় ছিল উপচে পড়া ভীড়। প্রদর্শীত হয়েছে স্থানীয় কবি মঞ্জুরুল হক তারা এর অসংখ্য বই। বই মেলাটিকে আরো প্রাণবন্ত করতে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা একাডেমীর অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। শিল্পকলা একাডেমীর এক দল শিল্পীদের বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন ও স্থানীয় কিছু সংষ্কৃতি প্রেমীদের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে মেলাটি আরো মনোমুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
২২ শে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ মেলার দ্বিতীয় দিনেও বইপ্রেমীদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। কলমাকান্দা উপজেলায় কিছু সংগঠিত তরুণদের এমন মহতী উদ্যোগ প্রকৃতপক্ষে খুবই প্রশংসার দাবিদার। যদিওবা উদ্যোগটি ছোট পরিসরে হয়েছে তারপরও এটি কলমাকান্দার মানুষদের মাঝে একটা গর্বের বিষয়ে পরিণত হয়েছে এই ভেবে যে কলমাকান্দা যদিওবা একটি হাওর বেষ্টিত এলাকা তথাপি এখানেও বইমেলার স্বাদ নিতে পারছে জ্ঞান পিপাসু মানুষ।