শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা সবার সাথে সহভাগিতা করবো
হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
বারসিক’র উদ্যোগে হরিরামপুর উপজেলা সেচ্ছাসেবক টিম, নারী বৈষম্য প্রতিরোধ কমিটির ৪০ জন সদস্য নিয়ে প্রত্নতত্ব ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণ জ্ঞার্নাজন বিষয়ক শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য সাটুরিয়া উপজেলার তেওতা বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ও কামতা নাহার গার্ডেনে এই শিক্ষা সফর আয়োজন করা হয়। সকাল ৯.০০ টায় হরিরামপুর থেকে বাস যোগে রওনা হয়ে বিকাল ৫.০০ পর্যন্ত দুটি স্পটে সকল অংশগ্রহণকারী জমিদার বাড়ি ও নাহার গার্ডেনে ঘুরে দেখে বিল্পুতির পথে পশুপাখি, বিভিন্ন ঔষুধি গাছ, জীবজন্ত, পরিবেশবান্ধব আগের দিনের জমিদারদের নকশিকাঁথা, কাঠের ফার্নিচার, পুরাতন কারুকার্য খাজকাটা ইটের দেওয়াল, ছয়ঘাট বিশিষ্ট পুকুর ঘাট বিভিন্ন কারুকার্য দেখে অংশগ্রহকারীরা মুগ্ধ হন। একে অপরের সাথে তথ্য আদান প্রদান ও অভিজ্ঞতা সহভাগিতা করেন। শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করে সেসব যারা সামাজিক স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত।
এসব অংশগ্রহণকারী যেসব কাজ করে হরিরামপুরে আলোচিত তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ হলো: দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা, নারীদের সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ, বাল্য বিবাহরোধে সচেতনমূলক কাজ করা, স্কুল ছাত্রীদের সাইকেল চালাতে উদ্বুদ্ধ করা, স্থানীয় ও অতিথি পাখি মারা/শিকার রোধে ভূমিকা রাখা, বৃক্ষ রোপণ করা, খেলাখুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তাদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে আরো সম্প্রসাররিত করার জন্য এই শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, খ্রিষ্টীয় উনিশ শতকের একটি অপূর্ব নির্দশন বালিয়াটি প্রাসাদ। বালিয়াাটি জমিদার গোবিন্দ রাম সাহা ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন খ্রিষ্টীয় আঠার শতকের সময় একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী লবণ ব্যবসায়ী। দধীরাম,পন্ডিত রাম এবং গোপালরাম নামে চার পুত্র রেখে তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। সম্ভবত বালিয়াটি প্রাসাদটি তাঁর দ্বারাই নির্মিত হয়। ৫.৮৮ একর জমির উপর বিস্তৃত বিভিন্ন পরিমাপ ও আকৃতির দু’শতাধিক কোঠা ধারণ করেছে এই প্রাসাদ। উত্তর দিকে রয়েছে ছয়ঘাট বিশিষ্ট পুকুর। এছাড়া সাত খন্ডে বিভক্ত বিভিন্ন স্থাপনা, স্নানাগার, প্রক্ষালন কক্ষ প্রভৃতি। পুরো অংশটি চারিদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দক্ষিণ প্রাচীরে পাশাপাশি একই ধরনের চারটি খিলান দরজা রয়েছে। প্রতিটির উপর রয়েছে একটি করে পাথরের তৈরি সিংহ। স্থাপনাসমুহর আর্কষণীয় দিক হলো সারিবদ্ধ বিশাল করিনথিয়ান থাম, লোহার বীম, ঢালাই লোহার পেঁচানো সিড়ি ,জানালায় রঙিন কাঁচ, কক্ষের অভ্যন্তরে বিশাল আকৃতির বেলজিয়াম আয়না, কারুকার্যখচিত দেয়াল ও মেঝে ঝাড়বাতি ইত্যাদি ।
বালিয়াটি প্রাসাদটি বর্তমানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ১৯৬৮ সনের এন্টিকুইটি এ্যাক্টের ১৪ নং ধারা (১৯৭৬সনে সংশোধিত) এর আওতায় সুরক্ষিত হচ্ছে। পশ্চিম দিক থেকে দ্বিতীয় প্রাচীর নির্দশন প্রদর্শিত হচ্ছে ।
প্রত্নতত্ত ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণ জ্ঞানার্জন শিক্ষা সফরের স্বেচ্ছাসেবক সদস্য নুসরাত জাহান বলেন, ‘আজকের শিক্ষা সফরের মধ্যে দিয়ে আমাদের পুরাতন নির্দশন, পরিবেশবান্ধব আসবাসপত্র, অনেক ধরনের বৈচিত্র্যময় পশুপাখি, গাছপালা দেখে আমরা প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, যা আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরব।’