আদিবাসী ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। যাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংষ্কৃতি, আচারঅনুষ্ঠান, দৈহিক বৈশিষ্ট্য, রীতিনীতি ও সামাজিক প্রথা। এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কিছু আদিবাসীদের রয়েছে নিজস্ব ভাষায় লেখাপড়া করার বর্ণমালা। আবার কিছু আদিবাসীদের ভাষা মৌখিকভাবে চর্চিত হয়ে আসছে। আদিবাসীদের এই ভাষা চর্চার কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা মাধ্যমে চোখে পড়ে না। যার ফলে আদিবাসীদের ভাষা দিন কে দিন বিপন্ন হতে শুরু হয়েছে। বিপন্ন এসব আদিবাসীদের ভাষা সংরক্ষণে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ।
প্রতিবছরই আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সারা বিশ্বে পালন করা হলেও বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি পালন করা হয় না কখনও। আদিবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে দেশের কিছু কিছু স্থানে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়টি হলো ‘আদিবাসী ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন’। এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের ন্যায় কলমাকান্দা উপজেলাতেও পালিত হলো আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৯। টিডব্লিওএ (ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন) এর আয়োজনে, বারসিক, কারিতাস, ওয়ার্ল্ডভিশন, গাসু, বাগাছাস এর সহযোগিতায় দিবসটি সম্প্রতি পালন করা হয়। আদিবাসী দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলহাজ্ব আব্দুল খালেক তালুকদার (বীর মুক্তিযোদ্ধা)।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মি: অশোক চিসিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কলমাকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সুলতান গিয়াস উদ্দিন কলমাকান্দা, গাসুর কলমাকান্দা উপজেলা শাখার সভাপতি রিচার্ড রেংচেং, কলমাকান্দা শাখার বাগাছাসের সভাপতি তামস মানখিন সভাপতি, আদিবাসী নেতা মি: দোলন কুবি আদিবাসী নেতা। আদিবাসী দিবসের আগের দিন অর্থাৎ ৮ আগস্ট কলমাকান্দা উপজেলা শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলহাজ্ব আব্দুল খালেক তালুকদার ও সহকারি কমিশনারের উপস্থিতিতে মোমবাতী প্রজ্জ্বলন করা হয়, যা দিবসটি পালনের ক্ষেত্রে একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
আদিবাসী দিবসে আদিবাসী বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে কয়েকটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন যেমন, আদিবাসীদের ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে সংখ্যাগরিষ্ঠের সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস যেহেতেু সারাবিশ্বে পালন করে আসছে সেহেতু বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন ও আদিবাসীদের ভাষা চর্চা ও সংক্ষণের জন্য জাতীয় আদিবাসী ভাষা একাডেমি গড়ে তোলার প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।
আদিবাসীদের ভাষা থাকলেও সেটি শুধুমাত্র আদিবাসীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এটি সঠিক চর্চা ও সংরক্ষণের কোন সুব্যবস্থা নেই। আদিবাসীদের ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণ বিষয়টি শুধুমাত্র ব্যক্তি কেন্দ্রিকভাবে কিছু উদ্যোগ লক্ষ্যণীয়, যা কোন ভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠের ডোরগোরায় পৌছে দেওয়া সম্ভব না। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত ভাষা চর্চার নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা মাধ্যম থাকলে আদিবাসীদের জন্য খুবই উপকারে আসতো। তাই আদিবাসীদের ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে যেমন আদিবাসী নিজেদের সোচ্চার হতে হবে তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠেরও কিছুটা হলেও দায়িত্ব বহন করতে হবে। তা না হলে আদিবাসীদের ভাষা চর্চা ও সংক্ষণ অসম্ভব।