‘১০টায় ১০মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসা বাড়ি করি পরিস্কার’
ঢাকা থেকে সুদিপ্তা কর্মকার
বারসিক’র উদ্যোগে গতকাল ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরের চাদঁউদ্যানে অবস্থিত পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তিতে র্যালি এবং মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেসন-এর মাননীয় মেয়র আতিকুল ইসলামের স্লোগানের সাথে সমন্বয় রেখে র্যালির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়- ‘১০টায় ১০মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ ঘরবাড়ি করি পরিস্কার’।
র্যালি এবং মানববন্ধনের পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির কিশোর কিশোরী, নারী পুরুষসহ বারসিক’র সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম, কর্মসূচি কর্মকর্তা সুদিপ্তা কর্মকার, কমিউনিটি ফেসিলিটেটর হোসনে আরা রাফেজা এবং কুলসুম বেগম উপস্থিত ছিলেন। র্যালিটি পুরো বস্তি ঘুরে বস্তির প্রদক্ষিণ শেষে রাস্তায় মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনের সময় বস্তির সুখপাখি কিশোরী সংগঠনের সভাপ্রধান বর্ষা বলেন, ‘আমাদের বস্তিটি এমনিতেই অপরিস্কার এবং যেখানে সেখানে পানি জমে থাকে, আর এর ফলে ডেঙ্গুসহ আমাদের নানা রোগ হয়, আমরা নিজেরাই আমাদের চারপাশ পরিস্কার রাখলে এর থেকে মুক্তি পেতে পারি।’ কুলসুম বেগম বলেন, ‘বস্তিতে আমরা যারা নি¤œআয়ের মানুষেরা থাকি তাদের এমনিতেই প্রতিমাসের খরচ পোষাতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। তারপর কেউ যদি অসুস্থ হয় তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় ঋণ করতে হয় এবং এর বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় অনেকদিন। তাই আমরা নিজেরাই যদি একটু সচেতন হই, নিজেদের ঘরবাড়ি চারপাশ পরিস্কার রাখি। তাহলে এই ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে পারি।’
বারসিক’র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু মশার প্রাদুর্ভাব আটকাতে বাড়িতে জমে থাকা আবর্জনা জমা পরিষ্কার করতে হবে এবং যতটা সম্ভব নোংরা প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে স্যাঁতস্যাঁতে কোণা পরিষ্কার করে মশার স্প্রে দিয়ে মশা আটকাতে হবে। যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ জল জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি থেকে জল ফেলে দিতে হবে এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সবসময় মশারীর মধ্যে রাখতে হবে যেন তারথেকে অন্যকারো এই রোগ না ছড়ায়।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সুদিপ্তা কর্মকার হোসনে আরা রাফেজা, কিশোরী সংগঠন এর নেত্রী নুপুর প্রমুখ।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর পাশাপাশি এ বছর ডেঙ্গু রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চোখ রাঙাচ্ছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট আট মাসে ডেঙ্গু জ¦র এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং এই সেপ্টেম্বর মাসেও এ ধারা অব্যাহত থাকছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে যার অধিকাংশই ঢাকার বাসিন্দা। ডেঙ্গু জ্বর হল ডেঙ্গু নামক ভাইরাসের সৃষ্ট এক ধরনের জ্বর, যেটি মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। মূলত স্ত্রী এডিস মশা এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। সংক্রমিত এডিস মশার কামড় দ্বারা এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী একটি মশা একটি সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ানোর মধ্য দিয়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং এইভাবে চক্রাকারে অসুস্থ ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির থেকে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। কোন ব্যক্তি ডেঙ্গু জ¦র এ আক্রান্ত হলে তার চোখের পেছনে ব্যথা, প্রচন্ড জ্বর এবং মাথাব্যথা, পেশী এবং গাঁটে প্রচন্ড যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব, শরীরে ব্যথা, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে র্যাশ বা দানা দেখা দেওয়া, অবসন্নতা বা ক্লান্তি, ফুসফুস, লিভার ও হার্টে সমস্যা, গলাব্যথা, তলপেট ও সারা শরীরে যন্ত্রণা, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া (কাঁপুনি) ইত্যাদি।