বরেন্দ্রর মাটিতে নয়া ফসল কাসাভা
রাজশাহী থেকে রায়হান কবির রঞ্চু ও অমৃত সরকার
কাসাভা (ঈধংংধাধ) হলো উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের আলুজাতীয় ফসল যা পৃথিবীর প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি আফ্রিকা মহাদেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান খাবার। কাসাভা বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। গ্রামের মানুষ কাসাভার কন্দকে ‘শিমুল আলু’ বলে। গাছটির পাতা অনেকটা শিমুল গাছের মতো দেখতে বলেই হয়তো এরকম নামকরণ।
বারসিক ও খরিবোনা কৃষক ঐক্যর যৌথ উদ্যোগে চাঁপাই-নবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খরিবোনা গ্রামে ফিলিপিনি, দেশী বিলাতি, মেঘালয়া, দেশী, বিদ্যাসুন্দরী, নাগড়া, হানেম জাতের কাসাভার পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলে ফসল চাষের ক্ষেত্রে পানি সব থেকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। বারসিক এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন থেকে পানি সাশ্রয়ী ফসলের চাষ বিষয়ে প্রায়োগিক গবেষণার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্য স্থানীয় জাতের মসলা ফসলা ফসল, স্থানীয় জাতের বেগুন, স্থানীয় জাতের রবিশস্য, স্থানীয় জাতের মরিচ গবেষণা কার্যক্রম অন্যতম। এর ফলে একদিকে যেমন এলাকায় ফসলের জাতবৈচিত্র্য বৃদ্ধি হয়েছে অপরদিকে কৃষকরা পাচ্ছেন পানি সাশ্রয়ী ফসলের জাত।
গবেষণার এই চলমান কার্যক্রম হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি-২২ থেকে বারসিক নেত্রকোনা রির্সোস সেন্টারের বীজ সহযোগিতায় বরেন্দ্র অঞ্চলে নয়া ফসল হিসেবে কাসাভা চাষের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে ৫ শতাংশ জমিতে ৭টি জাতের দুইটি করে বীজ হিসেবে এর কাটিং রোপণ করা হয়। যেখানে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেন খরিবোনা গ্রামের কৃষকরা। আর পরিচর্যা ও পরিচালনা কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন কৃষক গবেষক মোঃ রায়হান কবির (রঞ্জু)। এ বিষয়ে খরিবোনা গ্রামের কৃষক মোঃ আজিজুর রহমান(৪৮) বলেন, ‘বারসিক আমাদের সব সময় পানি সাশ্রয়ী ফসলের জাত নিয়ে কাজ করার উৎসাহ দিয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এবার আমরা নতুন ফসল হিসেবে কাসাভার চাষ করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
কাসাভায় সাধারণভাবে ৩০-৪০ ভাগ শর্করা , ১-২ ভাগ প্রোটিন, এবং ৫৫-৬০ ভাগ জলীয় অংশ বিদ্যমান । আলুর তুলনায় কাসাভাতে দ্বিগুণেরও বেশি শর্করা থাকায় এটা আলুর চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিকর । যেখানে আলুতে ১৮ ভাগ শর্করা মাত্র ১৬.৩ ভাগ স্টার্চ হিসাবে থাকে সেখানে কাসাভার ৪০ ভাগ শর্করা ৯০ ভাগই স্টার্চ হিসাবে থাকে । এছাড়াও কাসাভাতে ক্রুড ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ভিটামিন সি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া যায় ।
এ বিষয়ে কৃষক গবেষক মোঃ রায়হান কবির(রঞ্জু) বলেন, ‘বারসিক খরাপ্রবণ এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন পানি সাশ্রয়ী ফসলের পরীক্ষামূলক চাষের মাধ্যমে ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে । কাসাভা দেশের অন্য অঞ্চলে চাষ হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে এটা নতুন। আশা করছি আমরা সফল হতে পারব।’