কৃষিই আমার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস
সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে চম্পা মল্লিক
অনিমা রানী মন্ডল (৪০)। তাঁর স্বামীর মনোদ্বীপ মন্ডল (৫৭)। তাদের মাত্র একটি ছেলে। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে বসবাস করেন তারা। ছোট ও নিরিবিলি এই সংসারটি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কৃষিকাজ ও ছোট একটি চিংড়ি ঘের আছে, তা দেখাশুনা করেন। দ’ুজন দু’জনের কাজে সহযোগিতা করেন।
অনিমা রানীর জন্ম হয়েছিলো একটি কৃষি পরিবারে। তাই কৃষির সাথে বেড়ে উঠা এই নারীর কৃষির প্রতি একটা অন্যরকম টান সবসময়। তিনি জানান, তার যখন বিয়ে হয়েছিলো তখন তিনি শ্বশুর বাড়িতে প্রথম এসে ও খেয়াল করছিলেন বাগানের সবজির দিকে। দেখলেন তারাও সবজি লাগায়। নতুন পরিবেশে আসার পর আস্তে আস্তে তিনি সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন কৃষিতে। সময় বাড়ার সাথে সাথে তিনি জানতে পারছিলেন, এলাকায় বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা আসেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেন। তবে এসব বিষয়ে তার কোন ধারণাই ছিলোনা যে, তারা আসলে কি কাজ করেন আর কাদের সাথে কাজ করেন। তাই তিনি সবসময় কারো না কারো কাছে জানতে চাইতেন। এমনভাবে একদিন তিনি জানতে পারেন, যারা কৃষি কাজ করেন তাদেরকে নিয়ে এনজিওরা কাজ করেন । এরপর তিনি তার স্বামীর কাছ থেকে একদিন জানতে পারেন,তাদের পরিচিত একজন বারসিক’র সাথে কাজ করেন। অনিমা রানী চলে গেলেন তার কাছে। বিস্তারিত শুনলেন, জানলেন। সবকিছুর মধ্যে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন এটা যে,তার প্রিয় কৃষি সম্পর্কে বারসিক থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষন পাওয়া যায় এবং তিনি আরো ও জানতে পারেন এখানে একটি নারী সংগঠন ও গড়ে উঠেছে যেখানে অনেক নারীই সঞ্চয় কাজের সাথে যুক্ত।
সবকিছু জেনে তার এতো ভালো লাগছিলো যে, সাথে সাথে এই সংগঠনে যুক্ত হওয়ার জন্য নিজেও আগ্রহ প্রকাশ করেন। তার আগ্রহ দেখে তারা অনিমা রানীকে যুক্ত করে নেন ২০১৯ সাল থেকে। এরপর থেকে তিনি সংগঠনের সঞ্চয় কাজসহ বিভিন্ন আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
তিনি আরও জানান, কৃষিকাজ তো আমি সবসময় করে আসছি, সবজি, ফল ও বিক্রি করছি, তবে তা স্বল্প আকারে। কিন্তু যখন থেকে বারসিক’র সাথে যুক্ত হয়েছি, বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছি,বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা নিয়েছি, তখন থেকে আমি ও অন্যদের মতো আমার বাড়িটিকে সাজাতে শিখেছি, নতুন নতুন জাত বাড়িয়েছি সবজি ও ফলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিভিন্ন রকম সবজি চাষের ফলে এখন আগের তুলনায় বিক্রিও করতে পারি বেশি বেশি।’ তিনি আরও জানান, আগের তুলনায় বেশি অর্থ ও উপার্জন করতে পারি। আর এই আয়ের টাকাগুলো আমাদের সংসারের অনেক কাজে লাগাতে হয়। কারণ, চিংড়ি চাষ থেকে সবসময় ভালো উপার্জন হয়না। বৃষ্টি একটু বেশি হলেই তলিয়ে যায় এবং সমস্ত মাছ বের হয়ে যায়। বেশি মাছ ছাড়তে তাই ভয়ে থাকতে হয়।’
সর্বশেষ তিনি তাই বলেন, ‘কৃষিই আমার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস। সারাবছর সবজি ও ফল এর মধ্যে থেকে কিছু না কিছু বিক্রি করতে থাকি। বিশেষভাবে কলা, সজিনা, আম, হলদি, পেয়ারা, ওল ও কচুরমুখী থেকে বেশি উপার্জনটা আসে। আমার খুব ইচ্ছা ছিলো কোন না কোন এনজিও এর সাথে থাকতে, যাতে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী সুন্দরভাবে কৃষিকাজ করতে পারি। আমার সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আর এ ধরণের এবং এর বাইরে আরো বিভিন্ন পরামর্শ আমি আশা করি যাতে এই পরামর্শ অনুযায়ী আমি আমার কৃষিতে আরো বেশি পরিবর্তন আনতে পারি।’