খরাপ্রবণ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বরেন্দ্র ভূমিতে অভিযোজিত টেকসই খাদ্যবৈচিত্র্য

কথায় বলে- ‘তোমার খাদ্যই তোমার পরিচয়’ । খাবার এখন আর শুধু ক্ষুধা মেটানোর উপকরণ নেই। খাদ্যের স্বাদ ও তা উপভোগ করার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে আদিকাল থেকে মানুষ খাদ্যের সন্ধানে যখন ছুটছে, পেয়েছে নানা খাদ্যবৈচিত্র্যের সন্ধান, তার কিছু হয়েছে অনেক বেশি পছন্দ আবার কিছু হয়তো কম পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন জাতি গোষ্টীর মধ্যেও খাদ্যের তালিকা এবং পছন্দের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তাই খাদ্য নিরাপত্তায় শুধু আর পেট ভরে খাবার বিষয় নয়, খাদ্যের পুষ্টিগুণ এবং পছন্দের খাদ্য তালিকাকেও গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যেও খাদ্যের বৈচিত্র্য আছে। বৈচিত্র্য আছে ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকেও। বন্যাপ্রবণ চরাঞ্চলের মানুষের পছন্দের খাদ্য তালিকা একরকম আবার খরাপ্রবণ উচুঁ বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের খাদ্য তালিকা আরেকরকম বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় মানুষ খাদ্য পছন্দ এবং বেঁেচ থাকার জন্য কিছু খাদ্যকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। দুর্ভোগে-দুর্যোগে সেকল খাদ্য মানুষের অনেক বেশি উপকার করে থাকে। তাই যুগে যুগে মানুষ তাঁর পছন্দের খাদ্যগুলো রক্ষায় চেষ্টা করে আসছে। এরকমই বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসীদের অন্যতম পছন্দের একটি খাবার গড় আলু। চারিদিকে যখন ঠাঁ-ঠাঁ- বরেন্দ্র রোদ্র আর অনাবৃষ্টি খরা তখনও দিব্যি টিকিয়ে থাকে এই গড় আলুর গাছ। আর এই খাদ্যটি বরেন্দ্র অঞ্চলের বসবাসরত আদিবাসীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছেন। এই অঞ্চলটি তুলনামূলক অনেক উচুঁ এবং খরাপ্রবণ হওয়ায় খুব সহজেই গড় আলু চাষের জন্য অনেক বেশি উপযোগী। খরা এবং তীব্র তাপদহের মধ্যেও দিব্যি টিকিয়ে থাকে গড় আলুর গাছ। স্থানীয় পরিবেশসহনশীল এই খাদ্যটি দিনে দিনে বন-বাদাড় না থাকার কারণে এর অনেকগুলো জাত হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু প্রান্তিক মানুষ তাঁদের খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিজেদের প্রয়োজনে এটি সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বরেন্দ্র অঞ্চলেও এর বিরূুপ প্রভাব পড়ছে। দিনে দিনে খরা ও তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এই সংকটকালিন সময়ে গ্রামের প্রান্তিক মানুষ গড় আলুর বিভিন্ন উপযোগী জাতগুলো সুরক্ষা করে তাঁদের পছন্দের খাদ্যবৈচিত্র্য সুরক্ষা করছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিযোজিত টেকসই খাদ্য গড় আলু বা মেটো আলু নিয়ে মাঠ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি করেছেন বারসিক’র গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম

টেকসই ও অভিযোজিত খাদ্য গড় আলু সুরক্ষায় আদিবাসীদের উদ্যোগ
চারিদিকে বিষ আর বিষে ছড়াছড়ি, রাসায়নিক কীটনাশকের প্রভাবে বনে বাদাড়ে আইলে বা পরিত্যাক্ত জমিতে অনেক খাদ্যবৈচিত্র্য আজ বিলীন হতে চলেছে। একদিকে মানুষের প্রকৃতি বিধ্বংসী কার্যক্রম অন্যদিকে বৈশি^ক জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিরূপ প্রভাবেও বিভিন্ন অঞ্চলের খাদ্যবৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলটিও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নানাভাবে বিপর্যস্ত। দিনে দিনে অনাবৃষ্টি বেড়ে গেছে, তাপমাত্রা বাড়াসহ তীব্র তাপদহের পরিমাণ বাড়তেই আছে। একসময় মানুষ তাঁর প্রকৃতি থেকেই অনেক খাদ্য সংগ্রহ করতো। কোন চাষাবাদ না করেও এমনিতেই সেসকল খাদ্য উৎপাদন হতো প্রাকৃতিকভাবে। বরেন্দ্র অঞ্চলটিতে ঐতিহ্যগতভাবেই প্রাচীনকাল থেকে আদিবাসীগণ বসবাস করেন। এই বরেন্দ্র ভূমির বৈচিত্র্য এবং প্রাণভেচিত্র্য সম্পর্কে তাই আদিবাসীদের জ্ঞান অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাই তাঁদের নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সংকটকালিন সময়ে খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখেন।


শুরুটা ২০১৫ সালে। ভুগরোইল আদিবাসী পাড়ার পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের কৃষ্ণ বিশ^াস (৪৫) তাঁর বাপ-দাদার কাছ থেকে জেনে এসেছেন যে গড় আলুর (মেটে আলু) জাত প্রায় সাত থেকে আটটি বা তাঁরও বেশি। এমনকি তিনি ছোটকালে এসবের সাথে পরিচিতও হয়েছিলেন এবং এগুলো খেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে এর জাত মাত্র দুই থেকে তিনটি লক্ষ্য করা যায়। তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন গড় আলুর চাষ বাড়াবেন। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক তাঁর এই কাজে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। প্রথমে ২০১৫ সালে দুইটি জাত দিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হলেও এখন ৪টি জাত সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলভাবে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তাঁর এই জাতগুলো অন্যান্য গ্রামেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই গড় আলু আমাদের অনেক পছন্দের একটি খাবার, বিশেষ করে সবজি হিসেবে অনেক উপকার, খরার মধ্যেও ভালো হয়। কোন পানি লাগেনা, সার লাগেনা , এমনিতেই এগুলো একটু যতœ করলেই হয়ে যায়।” বারসিক’র কর্মকর্তা ব্রজেন্দ্র নাথ (৪২) বলেন, ‘গড় আলু গ্রামের মানুষের বাড়িতে পরিত্যাক্ত জায়গায় চাষ করে, এটি অনেক বেশি খরা এবং তাপমাত্রা সহনশীল।’ তিনি আরো বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িগুলোতে এই গড় আলু উৎপাদন করে।” পর্যবেক্ষণে দেখা যায় গড় আলুর বিভিন্ন জাতবৈচিত্র্যগুলো আদিবাসী পরিবারগুলোই বেশি সুরক্ষা করছেন। তাঁরাই বেশি এগুলো সুরক্ষায় বেশি ভূমিকা পালন করছেন।

গড় আলুর জাতবৈচিত্র্য ও চাষ পদ্ধতি
মাঠ পর্যবেক্ষণ এবং প্রবীণদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে জানা যায়, একসময় বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচুর বনজঙ্গল ছিলো। এগুলোতে প্রায় নয় থেকে পনের ধরনের গড় আলুর জাত পাওয়া যেতো। কোনটাই চাষ করা হতোনা। তবে বাড়িতে দু’একটি জাত নিয়মিত যতœ করে লাগানো হতো। বেশিরভাগ জাতগুলো বনের মধ্যেই হতো। এখন বন বাদাড় বা পরিত্যাক্ত জমি না থাকায় এর জাতগুলোও অনেকটা প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে দশ জাতের গড় আলুর কথা জানা যায়, স্থানীয় ভাষায় যার নামগুলো হলো- হরিণ সিংহা গড় আলু (এটি হরিণের সিং এর মতো হয়), আলতা পেটি গড় আলু (আলতা রংগের, অনেক টেস্টি হয় এটি), তে পাতা গড় আলু (তিন পাতা বিশিষ্ট গাছ), গোল আলু, শুয়ো আলু, তেতো গড় আলু, শিখড় আলু, মঘু আলু, মাছ আলু (এটি গাছে বেশি ধরে), হাতি পায়া ইত্যাদি। এলাকাভেদে এগুলোর নাম বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন নামে জানা যায়। তবে বর্তমান বরেন্দ্র অঞ্চলে বাড়িতে বা বাড়ির আশপাশে পরিত্যাক্ত জায়গায় ৪-৫টি জাতের চাষ করা হয়। সেগুলো হলো আলতা পেটি, তে পাতা, হাতি পায়া, মাছ আলু, হরিণ সিংহা ইত্যাদি। জাত ভেদে এই আলু মাটির নীচে একেকটি আলু ৩ থেকে ৬০-৭০ কেজির বেশি ওজন হয়ে থাকে। লাগানোর কৌশলের উপর এর আকার বড় হওয়া নির্ভর করে। সাধারণত আদিবাসীগণ এই আলু ফাল্গুণ চৈত্র মাসে মাটিতে গর্ত করে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ও তুষ-ধানের কুড়া দিয়ে সেখানে বীজ রোপণ করে। সেখান থেকে গাছ বেড়িয়ে লতা আকারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একবছর পর বিশেষ করে চৈত্র বৈশাখ মাসে এটি তোলা হয়। অনেকে দু-তিন বছর পরেও তোলেন। তখন একটি গড় আলুর গাছ থেকে প্রায় ২-৩ মণ আলুও হবার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণ পানি জমে থাকেনা এমন উচুঁ জায়গায় এই গড় আলু রোপণ করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে ভুগরোইল আদিবাসী পাড়ার লিটন বিশ^াস (৫০) বলেন, ‘লাগানোর সময় গর্তটা ফাপা করে করতে পারলে এই আলু মাটির নীচে তার জায়গা পায়, তখন বাড়ে বেশি, ২ বছর পর তুললে দেখা যায় ২ তিন মণও হতে পারে।” যতœ হিসেবে তিনি বলেন ছাঁই ব্যবহার করলেই হয় মাঝে মাঝে। আর রোগ বালাই বলতে তেমন কোন রোগ বালাই হয়না। বনবাদাড় থেকে প্রথম গড় আলুর কয়েকটি জাত এনে বাড়িতে লাগান ভুগরোইল গ্রামের ক্লেমেন্তি বিশ^াস। তিনি ২০১৪ সালে তিনটি জাত নিয়ে প্রথম বাড়ির পাশে উচু জায়গায় লাগান। এরপর থেকে তিনি এই আলুর চাষ করছেন বাড়ির আনাচে কানাচে। তাঁর কাছ থেকেই বীজ নিয়ে এখন গ্রামটির প্রায় ৪০টি পরিবারই গড় আলুর চাষ করছেন।

দুর্যোগকালিন ও সংকটে গড় আলু খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখছে
করোনা- উত্তর বাংলাদেশে যখন চারিদিকে খাদ্য সংকট, খাদ্যের অপ্রতুল্যতা, তখন ঠিকই মানুষ তাঁর কাছের প্রকৃতি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র বরেন্দ্র অঞ্চলে একদিকে খরা এবং অনাবৃষ্টির কারণে ফসল হানি অন্যদিকে মহামারি করোনার কারণে খাদ্য সংকট সময়ে গ্রামের প্রান্তিক মানুষ বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এই গড় আলু খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। মহামারি করোনাকালে বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতাল, পাহাড়িয়া, পাহান, মুন্ডা, মাহাতো আদিবাসীরা ভৌগোলিকভাবে প্রান্তিক গ্রামগুলোতে বসবাস করায় তাঁদের খাদ্য হিসেবে গড় আলু অসামান্য ভূমিকা পালন করে। খরা এবং অনাবৃষ্টির সময়ে যখন আদিবাসী পরিবারগুলোর কোন কাজ থাকেনা, আয় ইনকাম কমে যায়, তখন নিদেন কালের সাথি হিসেবে এই গড় আলু তাদের চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ করে। শুধু আদিবাসী নয়, বর্তমান বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে এই খাদ্যটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে যখন অনেক খরা এবং পানির সমস্যা তখন পানি ছাড়াই অনেক খরার মধ্যেও এই গড় আলু বেড়ে উঠতে পারে। তেমন কোন যতœ বা খরচ ছাড়াই এর ফলন ভালো হয়ে থাকে। এ বিষয়ে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার ভুগরোইল গ্রামের নিখিল বিশ^াস (৪৫) বলেন, ‘করোনার সময় আমরা গড় আলুর সবজিসহ এর নানা উপকরণ তৈরী করে খেয়েছি, আমাদের অনেক উপকারে এসছে এই আলু।”

গড় আলুর স্বাদ এবং রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় এখন শহরের মানুষের মধ্যেও এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন শহরের বাজারগুলোতে মৌসুম ভিত্তিক গড় আলু বিক্রি হয়ে থাকে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এক কেজি গড় আলুর দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যা অন্যান্য আলুর চেয়ে দাম বেশি। অনেকে এখন বাড়িতে গড় আলু পরিকল্পিতভাবে বেশি করে চাষ করে তা থেকে আয় রোজগার করছেন। তানোর উপজেলার কৃষœপুর গ্রামের কালিদাস (৩৯) বলেন, “আমার খাবার পর আমি প্রায় ৩০ কেজির মতো গড় আলূ বিক্রি করেছি, যার বাজারমূল্য সেই সময়ে বরোশত টাকা ছিলো।” তিনি আরো বলেন, এটা আমার পরিবারের জন্য অনেক উপকার করেছে, আমি আরো বেশি করে রোপণ করেছি।’

গড় আলু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার বেড়েছে গ্রামগুলোতে
খাদ্য বা খাদ্যের নানা রেসিপি এমন একটি বিষয় যা অনেক সময় দেখে দেখে চর্চার মধ্যে দিয়ে একজন থেকে আরেকজনে এবং এক কমিউনিটি থেকে আরেক কমিউনিটিতে প্রসার ঘটে। বিশেষ করে এর রান্না পদ্ধতি, উপকরণগুলো যখন মানুষ জানতে পারে, জ্ঞান-অভিজ্ঞতাগুলো যখন বিনিময় হয় তখন প্রচলন বা ব্যবহার বেড়ে যায়। এভাবেই এক এলাকার খাদ্য উপকরণ বা রেসিপি এখন অন্য এরাকাতে বা অন্য কমিউনিটিতেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে একসময় গড় আলু খাদ্য হিসেবে শুধু আদিবাসী পরিবারগুলোতে খাদ্য হিসেবে বেশি ব্যবহার হলেও দিনে দিনে তা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও ব্যবহার বেড়েছে। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠার বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাগঞ্জসহ আশপাশের এরাকাগুলোতে গড় আলুর বীজ বিনিময় এবং এই খাদ্যবৈচিত্র্য নানাভাবে প্রদর্শনীতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করার ফলে সেই এলাকাগুলোতে এখন প্রায় সকল পরিবারের মধ্যে গড় আলুর চাষ করছেন। বারসিক’র কর্মএলাকার গ্রামগুলোতে মাঠকর্মীদের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার ১৪৫টি গ্রামে ৮৫০০ পরিবারেরর মধ্যে প্রায় ৫৬৭০টি পরিবার সক্রিয়ভাবে গড় আলু চাষ ও উৎপাদন নিজে করছেন এবং সেগুলো তারা খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রেখেছেন। একইসাথে তাঁদের দেখাদেখি অন্যান্য পরিবারগুলো এই গড় আলু চাষ বা কোন না কোনভাবে তা কিনে নিয়ে ব্যবহার করছেন। কমিউনিটি ভিত্তিক স্থানীয় বারসিক কর্মীদের তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, বিগত আট বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিভিন্ন জাতের গড় আলুর বীজ বিনিময় হয়েছে প্রায় ৮৫০০ এর বেশি মানুষের মধ্যে। যা এখন অন্যান্য এরাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে এই বীজ বিনিময়গুলো গ্রাম পর্যায়ে হচ্ছে। বারসিক স্থানীয়ভাবে জনগোষ্ঠীর চাহিদা বিবেচনায় এই গড় আলুর বীজ উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

উপসংহার
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল তথা বরেন্দ্র অঞ্চলটি অনাবৃষ্টি এবং খরার কারণে দিনে নানা ধরনের দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব অন্যদিকে প্রকৃতি বিধ্বংসী কিছু কার্যক্রমের কারণে আঞ্চলিকভাবে স্থানীয় খাদ্যবৈচিত্র্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এর মধ্যেও এরকম সংকটকালিন সময়ে দুর্যোগ সহনশীল একটি খাদ্যবৈচিত্র্য গড় আলু স্থানীয় জনগোষ্ঠী সুরক্ষা এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন একান্ত তাঁদের প্রয়োজনেই। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র একটি মাঠ পর্যবেক্ষণ সমীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার ১৪০টি গ্রামে ৮৫০০ পরিবারেরর মধ্যে প্রায় ৩৫০০ পরিবার সক্রিয়ভাবে গড় আলু চাষ ও উৎপাদন নিজে করছেন এবং সেগুলো তারা খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রেখেছেন। একইসাথে গ্রামগুলোতে গড় আলুর বীজ বিনিময় হওয়ার ফলে এবং গ্রামে রান্না প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে সংগঠনটি এসব দুর্যোগকালিন খাদ্যের পরিচিতকরণসহ নানাভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যার ফলে অপ্রচলিত এবং নিরাপদ হিসেবে এই গড় আলুর চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য সবজির তুলনায় এই গড় আলু উৎপাদনে ঝুঁকি কম এবং ব্যয় নেই বলেই চলে। আবার বাড়ির পরিত্যাক্ত জায়গাগুলোতে ইেট চাষ করা যায়। রোগবালাই নেই বলে, একই সাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের খরাসহনশীল। যেকোন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও এই গড় আলু দিব্যি বেড়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে রাসায়নিক কীটনাশকমুক্ত সবজি এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে অসামান্য ভূমিকা পালন করছে এই গড় আলু। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে অভিযোজিত এই খাদ্যবৈচিত্র্য অসামান্য ভূমিকা রাখবে ।

happy wheels 2

Comments