খরা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় নাচোল কৃষকদের সফলতার কথা
বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম
বাংলাদেশের উত্তর -পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলটি খরাপ্রবণ একটি এলাকা। এই এলাকার মধ্যে উচ্চ বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নাচোল উপজেলা। দিনে দিনে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়াসহ খরা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা উৎপাদনে নানা সমস্যার মধ্যে পড়েন। কিন্তু থেমে নেই তাদের উদ্যোগ। অধিক পানি নির্ভর ফসলের পরিবর্তে কম পানি নির্ভর শস্য ফসলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করেন। কৃষক কৃষক অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কৃষকদের নিজস্ব তথ্য প্রযুক্তিগুলো একে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার কারণে শত শত কৃষক কৃষাণী নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পেরেছেন।
শুরুটা ২০১৪ সালে। সেসময় বারসিক’র কৃষি গবেষক রায়হান কবির রন্জু কৃষকদের সমস্যাগুলো মাঠে ঘুরে ঘুরে জানা বোঝার চেষ্টা করেন এবং একই সাথে তিনি সফল কৃষকদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানগুলো আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেন। এভাবে দিনে দিনে নাচোল উপজেলার ২৯ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার কৃষক-কৃষাণী এখন নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নানা সমস্যার সমাধান এবং একে আরেকজনের মধ্যে কৃষি উপকরণ- জ্ঞান অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময় করেন।
সম্প্রতি নাচোল উপজেলার খরিবোনা গ্রামে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষক নেতৃত্বে কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রায়োগিক গবেষণা এবং উন্নয়ন বিষয়ক কৃষক অভিজ্ঞতা এবং মতবিনিমিয় অনুষ্ঠানে ওই এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা তাদের সফলতা, সম্ভাবনা এবং সংকটগুলো নিয়ে কথা বলেন।
একসময় এই এলাকায় বসতবাড়িতে যেমন সবজির চাষ হতো না। কিন্তু দিনে এই এলাকার মানুষগুলো তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে কম বেশি সবজির চাষাবাদ করেন। দীর্ঘ সময়ে কৃষক-কৃষাণীদের অভিজ্ঞতা এবং বীজ বিনিময়ের ফলে এই এলাকায় প্রায় ৫০টির অধিক মডেল পুষ্টিবাড়ি তৈরি হয়েছে। যা এই এলাকার কৃষক-কৃষাণীদের প্রেরণা দেয় সবজি চাষের।
সারের সংকট মোকাবেলা এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চার উদ্যোগ হিসেবে এই এলাকায় এক এক করে ২০টি পরিবার এখন ভার্মী কম্পোস্ট তৈরি করেন। নিজেরা তা জমিতে প্রয়োগ করেন এবং বিক্রিও করেন। এর ফলে সারের ক্রয়ের জন্য তাদের অতিরিক্ত টাকাও খরচ কম লাগে। অন্যদিকে নিরাপদ শস্য ফসল ফলাতে পারছেন কৃষকরা। কমপানি নির্ভর শস্য ফসল উৎপাদনে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমগুলো নিয়মিত হওয়ার কারণে এখানে কমপানি নির্ভর শস্যফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাসাভা, দেশি জাতের বেগুন, মরিচ, খরাসহনশীল ধানজাতসহ বিভিন্ন ধরনের শস্য ফসল চাষে সফলতা পেয়েছেন। দেশিয় জাতে বীজ সংরক্ষণ এবং প্রসারে এলাকায় প্রায় ২৪টি বীজবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসকল বাড়ি থেকে কৃষকরা বীজ বিনিময় করে থাকেন।
এলাকায় ক্যারেট পদ্ধতিতে বিভিন্ন মসলা এবং সবজির চাষের ফলে নতুন করে আশা দেখছেন কৃষকরা। বাড়িতে পরিত্যাক্ত মাটিতে ক্যারেট পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ আদার চাষ করছেন। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ক্যারেট পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন।
এ ছাড়াও এলাকায় পরিবেশবান্ধব উন্নত চুলার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। সবজি বৈচিত্র্য আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সফল কৃষকদের আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে কৃষক মো: ফেন্টু মিয়া বলেন, ‘একসময় আমার কোন জায়গা জমি ছিলোনা, কিন্তু আমি সবজি বীজ এবং চারা বিক্রি করেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছি।