পাহাড়ি ঢল ও হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ফসলী জমি
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে খায়রুল ইসলাম অপু
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নেত্রকোণা অঞ্চলে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এছাড়া পাহাড়ি ঢল, বন্যা, বন্যার সাথে বালি, সীমান্তে পানীয় ও সেচের পানির সংকট, হাতির আক্রমণ, বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তিসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে মানুষের জীবন আজ সংকটাপন্ন।
নেত্রকোনা জেলা কলমাকান্দা উপজেলার উত্তর র্পূবাঞ্চালের গারো মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে সীন্তর্বতী ৮নং ইউনিয়ন রংছাতি। রংছাতি ইউনিয়নের অবহেলিত প্রান্তিক ছোট একটি গ্রাম সন্ন্যাসীপাড়া। এ গ্রামের উত্তরে মেঘালয় পাহাড়, পশ্চিম-দক্ষিণে মহাদেও নদী ,র্পূব দিকে চন্দ্রডিংগা ছড়া-বেদগড়া ছড়া, হাতিবেড় ছড়া। এ গ্রামে গারো, হাজং ও বাঙালিসহ তিনটি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস রয়েছে।
পাহাড়ি ঢল ও বন্য হাতির উপদ্রুপ এই গ্রামের মানুষের অন্যতম প্রধান সমস্যা। আমন ও বোরো মৌসুমের বন্যহাতি খাদ্যের সন্ধ্যানে নেমে আসে পাহাড় থেকে। কৃষকের ফসল নষ্ট করে। ধান ক্ষেত, সবজি ক্ষেত নষ্ট করে। মানুষ যখন তার ফসলের জমি রক্ষা করতে যায় তখনই হাতির সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। ২০২২ সালে নূরুল ইসলামের জমিতে হাতি নামলে অনেকের সাথে নূরুল ইসলাম যান মশাল হাতে হাতিকে তাড়া দিতে। নিজের জমিকে বাঁচাতে গিয়ে হাতি নূরুল ইসলামকে পায়ে পিষে মেরে ফেলে।
এই বিষয়ে নূর জাহান (৫৫) বলেন, ‘আজ থেকে ৩৫ বছর আগে পাহাড় যখন ধ্বংস হতে শুরু করে তখন আমার বয়স ছিল ২০ বছর। পাহাড়ি ঢলের কারণে আমাদের মাটির দেয়াল ভেঙ্গে যায়। আবাদী জমি বালুতে তলিয়ে যায়। গরুর গোয়ালে হাটুপানির সমান। সে সময় গরু পাহাড়ে খাবারের জন্য ছাড়লে পাথরের চিপায় পরে মরে থাকত। অনেকের গরু বাঘ মেরে ফেলতো।’
এলাকার কৃষকরা প্রতিবছরেই পাহাড়ি ঢল ও ঢলের সাথে ভেসে আসা বালু পাথরের কারণে চাষবাস করতে পারেন না। আমন মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের কারণে তারা ঘরে ফসল তুলতে পারতেন না অনেকসময়। অন্যদিকে যে ফসল টিকতো সেগুলোও বন্য হাতির তান্ডবে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারতেন না অনেকসময়। এলাকাবাসীরা জানান, ১৯৮৮ ও ১৯৯৫ সালের পাহাড় ধ্বসে অনেক বালু পরে ছিল। পাহাড় থেকে মরা হরিণ, গরু .ছাগল ভেসে আসছিল। এসময় এলাকায় অনেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছিলেন।
নূর জাহান জানান, এখন পাহাড়ি ঢল বেশি হওয়ার কারণে সন্যাসী পাড়ার অনেক কৃষকই চাষবাস করতে পারছেন না। এছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে পাহাড়ের পাদদেশে হাতি নেমে আসে এবং কৃষিজমির ক্ষতি করে। ফসল খাওয়ার পর পায়ে মাড়িয়ে ফসলের জমি নষ্ট করে।