হাঁস পালনে সফলতার হাতছানি কুলতলীর আঞ্জুমানারা বেগমের
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল আলীম
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার উপকুলবর্তী ইউনিয়ন মুন্সিগঞ্জের কুলতলী গ্রামে বাবা মায়ের সাথে বসবাস করেন আঞ্জুমানারা বেগম (৩৪)। তিনি এক সন্তানের জননী। মাত্র ১২/১৩ বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসেন তিনি। কিন্তু একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ার পরপরই স্বামীর সাথে পরিবারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয় তার। প্রতিনিয়ত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ বাড়তে থাকে। অবশেষে দুই জনের অভিভাবকদের সমন্বয়ে দুই জনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এবং কন্যা সন্তানটি মায়ের কাছে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকেই বাবার বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে দিনমজুর কাজের মাধ্যমে চলতে থাকে তার জীবন।
আঞ্জুমানারা বেগম গত সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে বারসিক’র বাস্তবায়নে নেটজ (পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস) এর সহাযোগিতায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন। তিনি মুন্সিগঞ্জের কুলতলীর ধুন্দল সিএসও দলের সম্পাদিকা। ধুন্দল সিএসও দলের সদস্য হওয়ার পরে জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত সাপ্তাহিক গ্রুপে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নিয়মিত গ্রুপে আলোচনা পরবর্তী তিনি কুচিয়ার ব্যবসা ও হাঁস, মুরগি পালন করার সিদান্ত গ্রহণ করেন। তারই পরিপেক্ষিতে পরিবেশ প্রকল্প থেকে বারো হাজার টাকা দিয়ে জীবন্ত কুচিয়া ক্রয় করে এবং তা শুকিয়ে বিক্রি করে। বাকি একহাজার তিনশত টাকার ছয়টি হাঁস, চারটি মুরগি ও একশত একুশ টাকার দুইটি গাছের চারা (কদবেল ও ছবেদা) এবং সবজির বীজ ক্রয় করেন। বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে মোট তের হাজার পাঁচ শত টাকার সম্পদ পান। তিনি হাঁস, মুরগি ক্রয়ের সময় নিজের কিছু টাকা যোগ করেন।
হাঁস, মুরগি ক্রয়ের প্রায় এক/দেড় মাস পর থেকে ডিম দেওয়া শুররু হয়। এরই মধ্য তিনি হাঁস, মুরগির ডিম বিক্রয় করে সাপ্তাহিক সিএসও মিটিংএ সঞ্চয় জমা করেন। একই সাথে অল্প করে কন্ট্রিবিউশন এবং দূর্যোগ ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কুচিয়া বিক্রয় করে লাভের টাকা দিয়ে একটি হাঁসের ঘর বানান এবং এখন ৪০ টার ও বেশি হাস মুরগি তৈরি করেছেন।
আঞ্জুমানারা বেগম প্রতিদিন ২০ টির মত হাঁসের ডিম বিক্রি করেন যার মূল্য ২০০-৩০০ টাকা। তিনি এর মধ্যে ডিম বিক্রির টাকা ও কুচিয়ার ব্যাবসার লাভের টাকা দিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনেছেন। তিনি এভাবে বিভিন্ন রকম সম্পদ বৃদ্ধি করছেন এবং আগামীতে তিনি নিজের একটি জায়গা ক্রয় করার কথা ভাবছেন যেখানে নিজের বাড়ি তৈরি করবেন। তিনি পরিবেশ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার পরে নতুনভাবে নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন, যা কিনা উপকূলীয় অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া অনেক নারীদের আত্মউন্নয়নে সাহস যোগাবে।