সুতার বুননে খাদিজার স্বপ্ন

সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল আলীম
সুই সুতার ইতিহাস অনেক পূরানো হলেও এটা গ্রামীণ নারীদের একটি ঐতিহ্য। সাধারণ কাপড়কে রঙ বেরংয়ের সুই সুতার বুননে করে তোলেন আকর্ষণীয়। হাজার বছরের এই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন গ্রামের অনেক নারী। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছেন।

তেমনি নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সুই সুতার বুননের কাজ করছেন সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জের বড়ভেটখালি গ্রামের খাদিজা খাতুন (৩৩)। এক দরিদ্র পরিবারে ৬ ভাইবোনের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন খাদিজা খাতুন। পিতা একজন দিনমজুর ও সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া আহরণকারী। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মারা যান তার মা। শুরু হয় দ্বিতীয় মায়ের সংসারে বেড়ে ওঠা। অভাবের কারণে ৮ম শ্রেণিতেই থেমে যায় তার লেখাপড়া। বিয়ে হয় যশোর সদর উপজেলার এক অতি যৌতুক লোভী পরিবারে। তাই খাদিজার পিতা উক্ত যৌতুকের টাকা না দিতে পারায় সংসারে স্বামী ও শ^শুর শ^^াশুরির অত্যাচারে একটি পুত্র সন্তানসহ চলে আসেন বাপের বাড়ি। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম, নিজের আয় নিজেকেই করে চলতে হয়। বেছে নেয় দিনমজুর। এভাবে চলতে থাকে তার জীবন। দিনদিন অভাব তাকে ঘিরে ধরেছিল। দিন আনা দিন খাওয়া। বাপের ভিটায় একটি কুড়ে ঘরে থাকেন তিনি।

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নেটজ বাংলাদেশের অর্থায়নে বারসিকের বাস্তবায়নের বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ (পরিবেশ) প্রকল্পে যুক্ত হন। তিনি তার আগ্রহ ও কর্মদক্ষতার ফলে উক্ত প্রকল্পের খলিসা সিএসও দলের ক্যাশিয়ার হন। উক্ত প্রকল্পের আওতায় খাদিজা খাতুনকে ১০ হাজার টাকায় ২ টা ছাগল, ৬ টাকার ৭ প্রকার বীজ, ১১৫ টাকার একটি ছবেদা গাছ, একটি কদবেল গাছ এবং এক হাজার টাকার হাঁস-মুরগি ও ২৩৭৯ টাকার রেশমী সুতা আয়বর্ধক সম্পদ হিসেবে সহযোগিতা পান ।

তিনি ছাগল পালনের পাশাপাশি রেশমি সুতা দিয়ে থ্রি পিসের উপরে ও কাথার উপরে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় নকশা তৈরি করেন। তিনি এভাবে অন্যন্য সম্পদের পাশাপাশি, দিনমজুরের ফাঁকে ফাঁকে রেশমি সুতার বুননের কাজ করেন ও তার প্রধান আয়ের পাশাপাশি আরো কিছু আয় করেন। তিনি এই বুননের কাজ বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল থেকে দেখে দেখে শিখেছেন। এভাবে তিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এভাবে কাজ করায় যদি ভালো সাড়া পাই তাহলে আমার আশেপাশে যারা বসে আছে তাদেরকে উৎসাহিত করে তাদেরও শিখাব এবং একটি আয়ের সুযোগ তৈরি করে দেব।’ এভাবেই গ্রামীণ জনপদের নারীরা নানাবিধ শৈল্পিক কাজ করে পারিবারিক আয়ের পাশাপাশি অতীত ঐতিহ্যকে আকড়ে ধরে ঁেবচে আছেন।

happy wheels 2

Comments