পরিবারের আয় থেকে গরু কিনলেন আকলিমা

সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার

পারিবারিক কৃষি উদ্যোগ থেকে একটি পরিবার তার প্রয়োজনে নিজের সম্পদ সুযোগ-সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের প্রয়োজন আর চাহিদা মাফিক খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করে। এর সঙ্গে উদ্বৃত্ত অংশ পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনকে বিলিয়ে দেয়া আর অতিরিক্ত অংশকে বাজারে বিক্রি করে দু’পয়সা আয় করে। এভাবে তাদের জমাকৃত সঞ্চয় থেকে বড় কোন স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পৌছায়।

oppo_1026


স্বামীর সাথে পারিবারিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন অনেক নারী। তেমনই একজন আগ্রহী নারী আকলিমা খাতুন (৪২) খাতুন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবাদ চন্ডিপুর মাঝের আইট গ্রামের আকলিমা খাতুন স্বামী ও দুই সন্তানসহ চার সদস্যের সংসার তাঁর। স্বামী মিকাঈল (৪৬) পেশায় দিনমজুর। পারিবারিক আয় বৃদ্ধির জন্য বাইরের বিভিন্ন কাজের পাশপাশি সংসারের নানাবিধ কাজে সহযোগিতা করেন। ছেলে আশিক ইলাহি এবার স্কুল মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন ও একমাত্র মেয়ে মাহি ৩য় শ্রেণীতে পড়ালেখা করে।


৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করা আকলিমা খাতুন স্বামীর সংসারে এসে অনেক কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন। ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিকের বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে কোয়েল সিএসও দলে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভা, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ধারাবাহিক অংশগ্রহণ করে আসছেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল মূল উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে পুকুরে দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষের জন্য প্রায় ১০ হাজার টাকার মাছ এর পোনা (রুই, কাতলা, মৃগেল, পুটি ইত্যাদি) সহযোগিতা করা হয় তাকে। এছাড়াও তাকে একটি কদবেল ও পেয়ারার চারা, কিছু বর্ষাকালীন বীজ ও চারটি হাঁস সহযোগিতা দেওয়া হয় প্রকল্প থেকে। প্রশিক্ষণ ও সম্পদ সহযোগিতা পাওয়ার পরে আকলিমার উদ্যোগ বেড়ে যায় বহুগুণ। স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে নিজের ৮ শতক পুকুরে সাদা মাছ এর খামার গড়ে তোলেন। নিয়মিত দেখাশুনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে মাছ চাষ করেন। মৌসুম শেষে মাছগুলো বড় হলে বিক্রি করে দেন। প্রায় ২৫ হাজার টাকার মাছ এককালীন বিক্রি করেন। সেখান থেকে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন এবং অন্যান্য আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় জমাতে থাকেন। এর মধ্যে তিনি গরুর খাবার হিসেবে ২ হাজার টাকার খড় কিনে মজুদ রাখেন এবং একটি গোয়াল ঘর তৈরি করেন।

oppo_1026


তাদের স্বপ্ন ছিল একটি গরু পালনের। কেননা তাদের বাড়িটি গরু পালনের উপযোগি পরিবেশ। তার বাড়ির চারপাশে প্রাকৃতিক খাবার বা ঘাষের উৎস রয়েছে। এজন্য তারা পরিবারের আয় থেকে নিজেদের সংসারের খরচ কমিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ যুগিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। নিজেদের এলাকা থেকে আটত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে একটি দেশীয় প্রজাতির গরু (বকনা) গরু ক্রয় করেন।


এ বিষয়ে আকলিমা মিকাঈল দম্পতি বলেন, “আমার অনেক আশা ছিল যে গরু পালন করব। আমার সেই আশ আজ পূরণ হয়েছে। জমানো ২০ হাজার টাকা এবং আরো ১৮ হাজার টাকা জমা করে একটি গরু কিনতে পেরেছি। গরু পালন করে আমরা সমাজে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।”
স্বামী স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায় এভাবেই গ্রামীণ পরিবারগুলো উন্নয়নের পথে ধাবিত হয়, যা কিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

happy wheels 2

Comments