কেমন আছেন ঘিওরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মাইলাগী আশ্রয়ণ প্রকল্প। এখানে নারী ও শিশুসহ অন্তত দেড়শত মানুষের বাস। জরাজীর্ণ বাসস্থান, রোদ-বৃষ্টি খেলা করে হরহামেশাই। এরপর ফি বছর নদী ভাঙনের কবলে এক এক করে বিলীন হচ্ছে মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল। যাতায়াত, খাওয়া ও ব্যবহারের পানি, স্যানিটেশন, চিকিৎসা ও বসতঘরের বেহাল দশায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এখানকার বাসিন্দারা। পরিবারের ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। অসহায় দিনমজুর এ মানুষগুলোর নিজেদের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলে সরকারের উদ্যোগেই হয়েছিল তাদের আশ্রয়। নানা প্রচেষ্টায় পাওয়া সরকার প্রদত্ত বসতঘরগুলোও এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা না থাকায় এ মানুষগুলো নিজেদের ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই বারবার ধরণা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে। কাজের কাজ হচ্ছে না একটুও।
manikgonj pic 1
উপজেলার মাইলাগী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮টি ব্যারাকের মধ্যে ৫টিই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৩টি ব্যারাকে ২৮টি কক্ষ রয়েছে যার মধ্যে ১২০ জন লোকের বাস। ঘরগুলোও ভেঙেচুরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় ৫টি ঘরের বাসিন্দারা চলে গেছে অন্যত্র। কোনো ঘরের চাল আছে তো বেড়া নেই, আবার বেড়া আছে তো দরজা নেই। এখানকার বেশিরভাগ নলকূপ অকেজো। টয়লেট সমস্যাও প্রকট। এখানকার বাসিন্দারা নানা সমস্যার কথা জানিয়ে বলছেন- বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই তারা ব্যবহার অযোগ্য এসব ঘরে মানবেতর অবস্থায় বসবাস করছেন।

সরজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, ২০০৬ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে আশ্রিত পরিবারের সংখ্যা ২৮টি। এদের জন্য নির্মিত নলকূপ সচল আছে মাত্র চারটি। প্রতি পাঁচ পরিবারের জন্য বাথরুম আছে একটি, তাও আবার ব্যবহার অযোগ্য। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দারা। নির্মাণের পর থেকে এ আশ্রয় কেন্দ্রের কোনো প্রকার সংস্কার হয়নি। সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য নেই ন্যূনতম চিকিৎসার ব্যবস্থা।
manikgonj pic 2
আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামত, টয়লেট, টিউবওয়েল ও উত্তর পাশে নদীর পাড় ঘেঁষে মাটি দিয়ে ভরাট করে প্যালাসিটিং করা প্রয়োজন। তা না হলে সামনের বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্প নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। যাতায়াতের রাস্তাটাও ভাঙ্গা। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনেকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে কিন্তু কোনো ফল পাননি বলে তিনি জানা। তিনি বলেন, “আমরা সরকারিভাবে কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। নেই শিশুদের কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে সমস্ত ঘরগুলো ধলেশ্বরী নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে সেখানকার বেশিরভাগ পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা খন্দকার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোন বাজেট নেই, মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলেই মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে যেন জরুরি ভিত্তিতে বসবাস অযোগ্য আশ্রয়ণ প্রকল্প মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়।

happy wheels 2

Comments