বরেন্দ্র অঞ্চলের বানভাসিদের পাশে তারুণ্য

বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম

1“আমরা নানা সময়ে নানাভাবেই সময় পার করে থাকি। কখনো আড্ডা দেই, কখনো খেলি বা অনেক সময় এমনিতেই সময় নষ্ট করি। চলমান সময়ে বন্যায় অনেক মানুষ কষ্টে আছে। আবার দেখছি বন্যার সময় অনেক বন্যপ্রাণীকে মানুষ মেরে ফেলছে। এসব দেখে আমরা আর ঠিক থাকতে পারলাম না। রাজশাহীর সকল তরুণদের সাথে, সংগঠনসহ সমমনা মানুষের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করলাম। সবাই এক হয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের বানভাসিদের সহযোগীতা করতে পাশে দাঁড়ালাম।” কথাগুলো বলছিলেন বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রের সভাপতি জাওয়াদ আহমেদ রাফি।
4f
সারা বাংলাদেশে বন্যার প্রভাবে মানুষসহ বন্যপ্রাণীও অনেক সংকেটর মধ্যে আছে। এই সময়ের দূর্যোগ এবং সংকটে বসে নেই তারুণ্য। তরুণরা নিজেও যেমন প্রত্যক্ষভাবে বানভাসিদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে। তেমনি আবার পাশের বা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষদেরকেও সহযোগিতা করার জন্যে আহবান জানাচ্ছেন। আর সেই কাজটি করলো রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণরা। বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র (বিইসিডিপি) এর পরিচালনা ও সমন্বয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব রাজশাহী, জিরো পয়েন্ট সিক্স জিআরজেড, স্টেপ-আপ আইটি ইন্সটিটিউশন, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব বরেন্দ্র, মোসাফির গার্মেন্টস কর্পোরেশন, সেভ দ্যা ন্যাচার এন্ড লাইফ সোসাইটি, বারসিক, বেটার ন্যাচার বেটার সোসাইটি, উত্তরবঙ্গ শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদসহ রাজশাহীর হৃদয়বান মানুষের যৌথ সহযোগিতায় ২৬ আগস্ট তরুণরা নওগাঁ জেলার বানভাসি ৪০০ পরিবারের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার, খাবার স্যালাইন তুলে দেন। একই সাথে ১০০ শিশু ও অসহায় প্রান্তিক মানুষের মধ্যে জামা কাপড় বিতরণ করেন।

20170826_133242

নওগাঁ সদর উপজেলার তুলসী গঙ্গা নদীর ধার ঘেসা চকরামপুর, শেয়াল পাড়া, মাদ্রাসা পাড়া, সরদার পাড়া, নওগাঁ সদরসহ মোট ছয়টি গ্রামের বানভাসি মানুষের মধ্যে এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তরুণরা। দিনব্যাপী কখনো রোদে পুড়ে, কখনো পানিতে দাঁড়িয়ে তরুণরা সুষ্ঠুভাবে সহযোগিতা করেন। তরুণরা একই সাথে বানভাসি বন্যাপ্রাণীগুলো রক্ষায় মানুষের প্রতি আহবান জানান। জিরো পয়েন্ট সিক্স জিআরজেড সাইক্লিস্ট এবং সংগঠনটির সভাপতি তরুণ জুবায়ের আহমেদ বলেন, “বানভাসি বন্যপ্রাণীগুলো বন্যার এই সময়ে জীবন বাঁচানোর জন্যে উচুঁ জায়গাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে, বসতবাড়িরর আশপাশে এসেছে, আমরা এগুলো যেন না মেরে ফেলি। এগুলো রক্ষায় সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বন্যপ্রাণী আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আমাদের উপকারে আসে।”

FF-v

দিনব্যাপী বানভাসিদের সহযোগিতা করার সময়ে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্চ এর পরিচালক মো. সেকেন্দার আলী, রোটারিয়ান চন্দন দেব, বারসিক এর বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম, বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রর ( বিইসিডিপি) সভাপতি জাওয়াদ আহমেদ রাফি, রোটার‌্যাক্ট এর সাবেক সভাপতি টিএম রাসেল, নয়ন চৌধূরী সিটি ইউনিট এর সভাপতি ইবনেসিনা জ্যোতি, সহ-সভাপতি মারজান খন্দকার, ০.৬ জিআরজেড এর সভাপতি জুবায়ের হোসেনসহ তরুণ সংগঠনের তরুণ নেতাগণ ।

ff-v-

উল্লেখ্য যে, তরুণরা ২৩ থেকে ২৬ আগস্ট মোট চারদিন বানভাসি মানুষের কল্যাণার্থে “ বানভাসি মানুষের পাশে তারুণ্য” দিন ঘোষণা করে। উক্ত চ্রাদিন তরুণরা সাইক্লিং করে, বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের কাছ গিয়ে বানভাসি মানুষের জন্যে সহযোগিতার আহবান জানান। সকাল, বিকাল ও রাতে তরুণরা নানা ক্যাম্পেইন করে মানুষদের মাঝে বানভাসি মানুষের সংকটের কথা জানিয়ে দেন। একই সাথে তাদের সহযোগিতার জন্যে এগিয়ে আসতে বলেন।

FF-V-F

তারুণ্য জেগে আছে, কথা কয়, এগিয়ে আসে মানুষের সংকটে, দূর্যোগে নিজের শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করে। পরিবেশ বিপর্যয়ে প্রতিবাদের আওয়াজ তোলে তারুণ্য। চলমান সময়ে বানভাসি মানুষসহ সকল প্রাণবৈচিত্র্য সংকট সমাধানে, সংকটের মূহুর্তে তরুণরা এগিয়ে এসে প্রমাণ করলো তারুণ্য জেগে আছে। দূর্যোগপূর্ণ পরিবেশে তরুণ তার নিজের মেধা এবং শক্তি দিয়ে দূর্যোগ মোবকাবেলা করবে। দেশের উন্নয়নে, জাতির উন্নয়নে তরুণ তাই সবসময় সবখানেই অগ্রগামী। উজ্জ্বল তারুণ্যের শক্তিতে এগিয়ে যাক বরেন্দ্র অঞ্চল। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তারুণ্যের জয় হোক।

happy wheels 2

Comments