নানান দুর্যোগ মোকাবেলা করেই কৃষকরা ফসল উৎপাদন করেন
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
মানিকগঞ্জ জেলার অর্ন্তগত হরিরামপুর উপজেলা প্রাণবৈচিত্র্যেভরপুর। উপজেলারটির উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী এবং শাখা নদী ইছামতি ও দিয়াবাড়ি বিল, ভাতচালা বিল, গোপিনাথপুর বিলসহ মাঠ-ঘাট বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর থাকে। হরিরামপুর পদ্মা সংলগ্ন নিচু এলাকা হওয়ায় প্রতিবছর বন্যা, অতিবৃষ্টি, নদী ভাঙন, ব্রজপাত, ঘন কুয়াশার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ মাথায় রেখে কৃষকগণ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে জীবিন ও জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভয়াবহতা বাড়ছে। চাষাবাদে ক্রমাগত পরিবর্তন তথা দূর্যোগের প্রভাব গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর বেশি পড়ছে।
দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গ্রাম পর্যায়ে কৃষকরা নানানভাবে উদ্যোগ গস্খহণ করে থাকেন। এছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে একে অন্যেকে পরামর্শ দেন তারা। মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বর্ষাকালে বন্যা একটি প্রধান দুর্যোগ। এই বন্যার সময় কীভাবে ফসল আবাদ করে সংসারের চাকাকে সচল করা যায় সেই বিষয়ে কৃষকরা নানানভাবে আলোচনা করেন। বর্ষা মৌসুমে যেহেতু মাঠ-ঘাটে সকল জায়গায় পানিতে পরিপূণ থাকে। তাই কৃষকরা সিদ্ধান্ত নেন যে, মাঠে থাকা কৃষি বীজবৈচিত্র্য রক্ষার জন্য রাস্তার পাশে কচুর চারা রোপণ করার।
এই প্রসঙ্গে হরিরামপুর উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের ভেলাবাদ গ্রামের কৃষাণী নাসিমা বেগম (৪৬) বলেন, “আমরা কৃষি কাজ করে বাঁইচা আছি। পালানে (ফসলী মাঠে) পানি কচুর চারা মইরা যাইবো, এজন্য রাস্তার পাশে উঁচু জায়গায় কচুর চালা লাগাইছি। ভাদ্র মাসে পালান/মাঠ থেকে পানি গেলে, জমিতে রোপণ করা হয়। কচু চাষে গোবর সার দিয়ে জমিতে শুধু রোপণ করলেই বড় হতে থাকে।” তিনি আরও বলেন, “কচু চাষে লতি/লতা পাওয়া যায়, যা জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত বিক্রয় করা যায়। বাজারে এক কেজি কচুর লতি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রয় করা যায়। একটি কচু গাছে আনমানিক ২ কেজি লতা/লতি পাওয়া যায়। একটি কচু গাছসহ কচুর মোথা ৩০-৫০ বিক্রয় করা যায়। কচু চাষ বেশ লাভজনক ও বন্যার সময় আমাদের এলাকায় সবাই তরকারি রান্না করে খায়।”
বিগত বছরে হরিরামপুর এলাকায় আমন মৌসুমে ধান চাষ করা সম্ভব হতো। কিন্তু বর্তমানে আমন মৌসুমে জমিতে বেশি পানি থাকায় বোনা আমন ধান চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া চর এলাকায় মাঠে বালির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি পড়ে। তাই কৃষকরা ধান আবাদের পরিবর্তে রবি শষ্য চাষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণপরেরর কৃষক শহিদুর বিশ^াস (৪৫) বলেন, “কৃষক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করা হয়। বন্যার পানি নেমে গেলে মাটির ধরন অনুযায়ী ধনিয়া, লাল শাক, পালন শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, গুড়াসজ, মুগ, কেলাই, খেসারি, পিয়াজ, রসুন, শরিষা ইত্যাদি চাষাবাদ করা হয়।”
কৃষক-কৃষাণীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শষ্যে ভরে উঠে কৃষকের ঘর, দেশ পরিপূর্ণ হয় খাদ্য শষ্যে। কৃষিতে কৃষকের দক্ষতাকে তাই স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কৃষকরা দেশের মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করে আসছেন। তারা যুগ যুগ ধরে পরিবেশসম্মত উদ্যোগ চর্চার মধ্য দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা করে আসছেন।