অতিরিক্ত ঠান্ডা ও বৈরী আবহাওয়ায় আলু চাষে কৃষকের মাথায় হাত

অতিরিক্ত ঠান্ডা ও বৈরী আবহাওয়ায় আলু চাষে কৃষকের মাথায় হাত

নেত্রকোনা থেকে পার্বতী রাণী সিংহ

অতিবৃষ্টি, অতি শীত এই ধরনের বৈরী আবহাওয়ায় নেত্রকোনা অঞ্চলের কৃষকের মাঠফসলে পড়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সময়মতো বীজ বপন করা যাচ্ছেনা, ফসল ভালো হচ্ছে না, খরচ বেশী হচ্ছে। আলো চায়ে কৃষকেরা ব্যাপক লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছে।

জেলার শ্রীরামপুরের উচুঁ জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল বিশেষ করে যে গুলোতে পানি কম লাগে এমন ফসল যেমন গম, সরিষা, আলু, তিল, লাউ, মূলা, মরিচ ইত্যাদি চাষ করেন কৃষকেরা। কোন বছর সরিষা ভাল হয় তো আবার কোন বছর আলু, পাট বা গম। কৃষক সাথে আলোচনায় জানা যায় প্রতিনিয়ত মাটির নিচের পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে। তবু তারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্ত মাঝে মাঝে বাধঁ সাধে আবহাওয়ার দ্রুতপরিবর্তনে ফলে সৃষ্ট প্রভাব। পাশাপাশি, ফসলে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া নামক অপরিচিত রোগের আর্বিভাব। তখনি কৃষক ভাবতে শুরু করে কি হল আর কেন হল, আর কি করা যায়?

Exif_JPEG_420

প্রতি বছরের মতো এ বছরেও শ্রীরামপুরের উঁচু জমিতে প্রতিবেশীদের নিয়ে দল বেধেঁ ক্ষেতে আলু তুলছে কৃষক-কৃষাণিরা। আলাপ হয় কৃষক শহীদ মিয়ার সাথে। তিনিও ক্ষেতে স্বপরিবারে রোদে বসে আলু তুলছেন। কিন্তু তার মনটা খারাপ। ভাল আছেন কিনা জিজ্ঞেস করতেই বলেন- ভাল নেই। ভাল না থাকার কারণ জানতে চাইলে বলেন, “আমার শরীরটা ভাল না। ঔষুদের পিছনে অনেক টাকা খরচ হইতাছে। তারপরে ২ কাটা জমিতে আলু করছি। এই বছর কোন ফলনই হয় নাই। গাছ গুলা বড়, তড়তাজা হইছে- তারপরেই মইরা গেছে। কিয়ের থাইক্কা হইলো বুঝতাছিনা। মাটিতে রস ছিল সব ঠিক ঠাকই ছিল। হঠ্যাৎ কইরা গাছ গুলা পুইরা গেছে। আলু অধের্কটা পচাঁ, খাওরা। খালি আমার না এই ভিটার প্রায় ৭০ জন কৃষকের একি অবস্থা। ফলন না হইলে কি বেচাম আর কি খায়াম?”

আলাপ হয় কৃষক হাসেন আলীর সাথে। তিনিও ক্ষেতে দল বেধেঁ আলু তুলছিলেন। তার কাছে আলুর ফলন কেমন হইছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যা খরচ করছি সবটাই লসে গেছে। আলু ছোট ছোট, পরিমানেও কম হইছে, নষ্ট হইছে। গত বছর ২ কাঠা জমিতে আলু পাইছি ৩০ মন; আর এবছর ১০ মন। জমিতে আলুচাষ করতে যে খরচ (বীজ, চাষ, সার, শ্রম) হইছে খরচ এ বছর তুলা যাইব নাহ।”একই বিষয় নিয়ে আরও আলাপ হয় কৃষক জিল্লু মিয়ার সাথে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এ বছর আলুর ফলন কম হওয়ার প্রেক্ষিতে কি কারণ মনে করছেন তিনি, কেন এমন হল? তিনি বলেন, “আমি ধারণা করছি কুয়াশা কম বেশী হওয়ার কারণে রোগ দেখা দিছে। মাটিতে রস ছিল মাটির কোন সমস্যা ছিল নাহ্।” এই প্রসঙ্গে কৃষক হাসেন আলী বলেন, “হয়ত বীজ লাগানোর সময়টা আগে পরে হইছে। কিছু বুঝতাছি না। এই বছর বীজ রাখলে পরের বার রোগ হয় কিনা চিন্তায় আছি।”

Exif_JPEG_420

ফসল নষ্ট হওয়ার জন্য একেক কৃষকের মন্তব্য একেক ধরনের। তারা কেউই সঠিক ভাবে ধারণা করতে পারছে না কি কারণে এবছর ফসল নষ্ট হলো? কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে? এজন্য তারা প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের উপসহকারীর সাথে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা বুঝতে চায় বা কারণ জানতে চায় ফসল নষ্ট হওয়ার এবং তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিবে এ বছর বীজ কিভাবে সংরক্ষণ করবে বা আদৌও বীজ সংরক্ষণ করবে কি না।

আলুর ফলন খারাপ খাওয়ার বিষয়ে উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা বলেন, “আর্দ্র আবহাওয়াতে এ ধরনের রোগ বেশী দেখা দেয়। তাপমাত্রা তারতম্যের কারণেও রোগটি দেখা দেয়। রোগটি ছত্রাক জনিত রোগ। যা নতুন চারাতে আক্রমণ করে এবং সহজে পচন ধরায়। গাছ গুলো খুব অল্প সময়ে মরে যায়। ক্ষেত পুড়ে যাওয়ার মতো হয়। রোগের নাম লেইট ব্রাইট বা আরলিব্রাইট।” এ রোগ থেকে আলু বা টমেটো গাছকে রক্ষার জন্য মাটিতে পটাশ বা এমওপি সার ব্যবহার করা। নাইট্রোজেন সার কম ব্যবহার করা। ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করলে ছত্রাক নাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি। তাছাড়া আলু চাষে কেইল বা আইল করে সারি বদ্ধ ভাবে করলে ফলন বেশী হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বীজ সংরক্ষনের জন্যও কিছু পরামর্শ দেন। যেমন- পরিপক্ক বীজ ছায়াতে শুকাতে হবে। বীজ গুলো কিছু দিন পরপর বাছাই করতে হবে। কোন আলু পচেঁ গেলে সেগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। বীজ সংরক্ষনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পদ্ধতিতে পরিপক্ক বীজ নেট ব্যাগে সংরক্ষণ করলে বীজে আলো বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে। যার কারণে বীজ গুলোতে ছত্রাক আক্রমনের আশংঙ্কাও কম থাকে। তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন উচুঁ জমিতে বোরো ধানের চাষ না করে ক্রমান্বয়ে আলু, গম, আগাম জাতের আমন ধান, সরিষা, পাট চাষ করার। যাতে করে জমির মাটিতে জৈবসার তৈরী হবে, মাটিতে সারের পরিমাণ কম লাগবে এবং ফসলে ফলনের পরিমাণও বাড়বে।

happy wheels 2

Comments