স্থানীয় জাতের সরিষা সংগ্রহ ও মাঠ দিবস
মানিকগঞ্জ থেকে মো. মাসুদুর রহমান
রবি মৌসুমে স্থানীয় জাতের তৈলবীজ ফসলের গুরুত্ব ও চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানো এবং ভোজ্য তেলের বাজার নির্ভরতা কমাতে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বাংগরা গ্রামে বাংগরা কৃষক-কৃষাণী সংগঠনের আয়োজনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী-যুবক ও বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টারের স্টাফ সদস্যদের অংশগ্রহণে সরিষা ফসল সংগ্রহ ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সরিষা আমাদের অন্যতম তেল ফসল। এই সরিষার তেল নানা কাজে ব্যবহার হয়। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে কৃষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “এবছর ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থানীয় জাতের মাঘী সরিষার ফলনে তেমন প্রভাব পড়ে নাই। আবার এই সরিষা অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় ১৫ দিন আগে পরিপক্ক হওয়ায় একই জমিতে বোরো চাষ করাও সম্ভব।” তিনি জানান, স্থানীয় জাতের প্রত্যেকটি ফসলের আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকতে পারে। এছাড়া স্থানীয় জাতের মাঘী সরিষা চাষে কোন আগাছা বাছাই, সারের উপরি প্রয়োগ ও সেচের প্রয়োজন পড়ে না। সরিষার খৈল উৎকৃষ্ট মানের জৈবসার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রতি বিঘায় ৪ মণ হারে এই সরিসার উৎপাদন হয়েছে যা যথেষ্ট লাভজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মাঠ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেসরকারী উন্নয়ন স্যাক’র নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “কৃষিকে শুধু সম্মানজনক পেশা বললেই দায়িত্ব শেষ হবে না, বিভিন্ন পেশার মানুষদেরকে সরাসরি এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে, তবেই কৃষকদের মর্যাদা বাড়বে। আজকের সকলের অংশগ্রহণে ফসল সংগ্রহের মাধ্যমে কিছুটা হলেও কৃষকের কষ্ট আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি।” তিনি আরও বলেন, “দেশের সকল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার দায়িত্ব কেবলমাত্র কৃষকদের নয় আমাদের সকলেরই।” বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, “স্থানীয় কৃষক কৃষাণী সংগঠনের সহায়তায় এই বীজ বর্ধন প্লট থেকে এলাকার কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয় জাতের ধান, তৈলবীজসহ অন্যান্য ফসলের বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।”
বৈরি পরিবেশে মাঘী জাতের সরিষার ফলনে আকৃষ্ট হয়ে মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে আগত ৯ জন কৃষক তাদের জমিতে আগামী বছর ৩৬ কেজি মাঘী জাতের সরিষা লাগানোর আগহ প্রকাশ করেন। কৃষক সংগঠনের আয়োজনে কলাপাতায় দুপুরের খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে মাঠ দিবসের সমাপ্তি হয়।