তানোর জুড়ে মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণ…
তানোর, রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার
‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে, রঙিন করি মুখ…।’
পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের ‘মামার বাড়ি’ কবিতার পংক্তিগুলো বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। বইতে শুরু করেছে মুকুলের পাগল করা সুঘ্রাণ। যে গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে আমের মুকুল। আম খ্যাত অঞ্চল রাজশাহী। আর এই অঞ্চলকে বলা হয় আমের রাজধানী।
জেলার তানোর ও মোহনপুর উপজেলায় রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, আম বাগানের সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেঁয়ে গেছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সুবাসিত ঘ্রাণ।
প্রায় ৭৫ শতাংশ গাছেই এসেছে মুকুল। তানোর উপজেলার বাগান মালিক ও আম চাষীরা আশা করছেন বড় ধরণের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে। আমচাষী ও বাগান মালিকরা পরিচর্চা নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। যাতে করে গাছে গুটিধরা সময় কোনো সমস্যা না হয়।
তানোর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিএমএফ এমদাদুল হক ইত্তেফাককে জানান, ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে ৩৬০ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে। এলাকার বেশি আমবাগান রয়েছে তালন্দ, কালনা, গোকুল, সিন্দুকাই, আমশো ও কমলা গ্রামে। সেখানে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর ২৩০ বিঘা আমবাগানও আছে। বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আমরূপালি, আশ্বিনা, লক্ষণভোগ, লকনা ও মোহনভোগ গাছ বেশি রয়েছে। তবে পরীক্ষামূলকভাবে তানোরে রোপনকৃত বারি-৪ ও হাড়িভাঙ্গা আমগাছে মুকুল এসেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তালন্দ গ্রামের বাগান মালিক সেলিম উদ্দীন মন্ডল ও চাঁদপুর গ্রামের আম চাষী আব্দুল গণি জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে তাদের বাগানের আমগাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। মুকুলের রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষুধ স্প্রে করছেন তারা।
বাগান মালিকরা আরও জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, আমের মুকুলে এই সময় হপার পোকা ও পাউডারী মিলডিউ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই দুটি রোগে যেন আক্রান্ত না হয় সেজন্য চাষীদেরকে আমরা অনুমোদিত কীটনাশক মাত্রানুযায়ী স্প্রে করতে বলছি। হপার পোকা মুকুলের রস চুষে খায় আর পাউডারী মিলডিউ এর কারণে মুকুল বিকলাঙ্গ হয়। এই দুটি রোগ যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও অনুকূল আবহাওয়া থাকে তাহলে আমের ভালো ফলন আশা করা যায়।