তানোরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাটির দ্বিতল বাড়ি
রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির দ্বিতল বাড়ি। বেশিদিনের কথা নয়, প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো মাটির ঘর। যাকে গ্রামের মানুষ বলে গরিবের এসিঘর। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি অত্যন্ত ঠান্ডায় বসবাস উপযোগী এ মাটির ঘর এখন আর তেমন নজরে পড়ে না।
গ্রামের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, বিভিন্ন এনজিওর ঋণ ও কায়িক পরিশ্রম করা গরিব পরিবারগুলো এখন তৈরি করছে ছোট্ট আকারে দালান। তার উপরে তুলছেন টিনের চালা। একসময় তানোর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এ মাটির ঘর চোখে পড়তো। যেখানে লাল বা চিপটে মাটি সহজলভ্য সেখানে এ ঘরগুলো বেশি তৈরি করা হয়। কিন্তু কালের আর্বতে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির দ্বিতল বাড়ি। এই বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে গ্রামের গরিব ও দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবানও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করতেন।
জানা যায়, অতি প্রাচীনকাল থেকেই মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে এই বাড়ি ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল বা ব্যাট তৈরি করা হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া হয়। মাটির বাড়ি অনেকসময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে গ্রামের মানুষরা ইট-সিমেন্টের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন।
ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বির্বতনে ইট-বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়ি। উপজেলার অমৃতপুর ও মোহর গ্রামের সোবজুল হোসেন, আলমগীর হোসেন, উজ্জ্বল কুমার সূত্রধর, নিরাঞ্জন মার্ডিসহ আরো অনেকে জানান, মাটির তৈরি এই বাড়ি তারা পেয়েছেন পৈত্রিকভাবে। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাই এখনও তারা এই বাড়িগুলো ভাঙ্গেননি।
মাটির বাড়ি বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের পরিবর্তন আর প্রযুক্তির কারুকার্যে অধিকাংশ মানুষ মাটির বাড়ি ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় দীর্ঘ স্থায়ীভাবে বেশি লোক বসবাসের জন্য গ্রামের মানুষরা ইটের বাড়িঘর তৈরি করছেন বলে অনেকের ধারণা।