চৈত্রদিনের মুখোরোচক ফল বিলিম্বি
সাতক্ষীরা থেকে এস এম নাহিদ হাসান
বিলিম্বি। টক স্বাদের ফলটি দেখতে পটলের মতো। রসালো ও মুখোরোচক এ সবুজ ফলটি অনেকে কামরাঙ্গার সাথে মিলিয়ে ফেলেন। বিলিম্বি অক্সিডেসি গোত্রের অর্ন্তগত উদ্ভিদ। এটি কামরাঙ্গা গোত্রের ফল। স্বাদও অনেকটা কামরাঙ্গার মত। শুধু স্বাদ নয় প্রজাতি, বিন্যাস, পরিবার, গুণ সবকিছুতেই কামরাঙ্গার নিকটাত্মীয় এই ফলটি। বিলিম্বি আকারে তিন থেকে ছয় সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলটি টক হলেও তেঁতুলের মত কড়া না। এর বৈজ্ঞানিক নাম Averrhoa bilimbi। বিলুম্বু বা বেলেম্বু নামেও অনেকের কাছে পরিচিত।
কিছু মানুষ ধারণা করেন রসালো ও মুখোরোচক এ সবুজ ফলটি পৃথিবীতে আসতে বিলম্ব করায় এর নাম বিলম্বি হয়েছে। নামে কি আসে যায় অপ্রচলিত এ ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নিয়ে তেমন মতপার্থক্য দেখা যায় না। শীতকালে পাতা ঝরে গিয়ে বসন্তের আগমণে আবার নতুন সবুজ পাতা গজিয়েছে। আর গাছের ডাল ও কা- ঘিরে থোকায় থোকায় দেখা মিলছে ফল। হালকা সবুজ রঙ এর ফলটি চৈত্রের প্রচণ্ড গরমে পিপাসা নিবারক হিসাবে ভালো কাজ করে।
এ ফল কাঁচা খাওয়া যায়। কামরাঙ্গার মতোই এটি ঝাল-লবণ দিয়ে খেতে হয়। এছাড়া ছোট মাছ ও ডালের সাথে বিলিম্বির টক খেতেও ভালো লাগে। টক স্বাদের এই ফলটি দিয়ে অনেকে আচার বা চাটনিও তৈরি করেন। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ বিলিম্বিতে আমিষ, শ্বেতসার, চর্বি, খনিজ, ভিটামিন, ক্যারোটিন, ক্যালোরি রয়েছে। ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম রয়েছে। বিলিম্বি রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এছাড়া জন্ডিস ও চর্মরোগের ঔষধ হিসাবে এটা ব্যবহার করা হয়।
বিলিম্বি গাছ সাধারণত পাঁচ থেকে দশ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। নিয়মিত পাতা ছেটে ও ডালপলা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে প্রায় সারা বছরই ফল পাওয়া যায়। তবে চৈত্র মাসে গাছে প্রচুর ফল ধরে। একটি পরিপূর্ণ গাছে ৩০০ কেজি বা তার অধিক ফল ধরে।
বিলিম্বি মূলত উষ্ণ আবহাওয়ার উদ্ভিদ। তাই ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের উষ্ণ আবহাওয়ার অঞ্চলগুলোতে এ ফল ভালো জন্মে। ভারতের মহারাষ্ট্র, কেরালা, তামিল নাড়ু এবং গোয়ায় বিলিম্বি খুবই জনপ্রিয়। ঔষধি ফল হিসেবে বিলিম্বির অনেক গুণ রয়েছে। বিলিম্বির পাতা বিষধর প্রাণীর কামড় থেকে নিরাময় করে। ফল থেকে তৈরি সিরাপ প্রদাহজনিত চিকিৎসা, যৌন রোগের চিকিৎসাা জন্য ব্যবহার করে। এছাড়া এ গাছের ফুল ঠাণ্ডা, কাশির প্রতিশেধক হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
সাতক্ষীরার মধ্য কাটিয়া গ্রামের আকলিমা খাতুন বলেন, “সারাবছর এ ফল কম বেশি হয়। কিন্তু গরমের সময় গাছে ফল বেশি হয়। বিলিম্বি দিয়ে টক ডাল, আচার, চাটনি তৈরি করা যায়। এছাড়া হাই প্রেসারের রোগীর চার থেকে পাঁচটা এ ফল খাওয়ায় দিলে দ্রুত কাজ করে।”