মানিকগঞ্জের মিষ্টি কুমড়া
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ ॥
মিষ্টি কুমড়া চাষ করে মানিকগঞ্জের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মিষ্টি কুমড়ার চাষ। জেলার বিভিন্ন এলাকার ৩ শতাধিক চাষী অন্যান্য ফসলের (সাথী ফসল) সাথে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। অল্প সময়, স্বল্প খরচ আর ভালো ফলনে ওই অঞ্চলের কৃষকরা সত্যিই অনেক খুশি।
এ অঞ্চলের অর্থকারী ফসল ধান, ভুট্টা চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষকের জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ এনে দিয়েছে নতুন গতি। কৃষকদের জীবন-জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে কৃষির এই সফল পরিবর্তন। জেলার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় হচ্ছে। উর্বর বেলে-দোআঁশ মাটির কারণে জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মিষ্টি কুমড়া আবাদের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাইকাররা মাঠ থেকেই কিনে নিচ্ছেন কুমড়া। অন্য জেলায় বিক্রি করে তাদেরও থাকছে ভালো মুনাফা। তাই বেকার যুবকরা ঝুঁকছে কুমড়া চাষে। অধিক লাভ এবং দীর্ঘদিন অপচনশীল থাকার জন্য কৃষি বিভাগও দিচ্ছে প্রযুক্তি সহায়তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে কুমড়া চাষ বদলে দিতে পারে মানিকগঞ্জের অর্থনীতি।
জেলায় সবচেয়ে বেশি মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে ঘিওর উপজেলায়। ঘিওর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ঘিওরে প্রায় সাড়ে ৪শত হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। কৃষকরা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ফুলকপির চাষ করে। একই জমিতেই মাসের মাঝামাঝি সময়ে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার ফলন পাওয়া যায়। অন্যান্য ফসলের সাথে কুমড়া আবাদ করায় এতে কৃষকদের আলাদা কোনো খরচ করতে হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই কমবেশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। তবে ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া, চঙ্গশিমুলিয়া, মাইলাগি, বড়বিলা, নালী, বাঙ্গালা, বালিয়াখোড়া, বরুরিয়া, পয়লা, কুইষ্টা গ্রামে উল্লেখযোগ্য হারে কুমড়ার আবাদ হয়।
এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া মানিকগঞ্জ কাঁচা বাজার আড়ত, আশুলিয়ার বাইপাইল সবজি আড়ত ও রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারী দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা।
চলতি বছর ৯০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুরাণ গ্রামের কৃষক মইজুদ্দিন মিয়া। তিনি জানান, কুমড়া চাষে জমিতে বিঘাপ্রতি খরচ প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘাতে কুমড়া বিক্রি করে লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
শিবালয় উপজেলার বড় বুতনী গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষি মোরতোজ আলী জানান, এবার তিনি ১৩ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা। তিনি আশা করছেন অন্তত ৩ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে পারবেন। এ ছাড়াও হরিরামপুর ও সাটুরিয়া উপজেলায় মিষ্টি কুমড়া চাষে যারা লাভবান হয়েছেন তাদের মধ্যে মো. কবির, এশার আলী, গোবিন্দ মন্ডল, কুন্নু মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় তারা কুমড়া আবাদ করে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন। পাশাপাশি বিক্রিতেও তেমন কোনো ঝামেলা নেই। পাইকাররা মাঠ থেকেই নগদ টাকায় কিনে নিচ্ছেন কুমড়া।
পয়লা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন জানান, এক বিঘা জমি থেকে সর্বোচ্চ ১১শ’ থেকে ১২শ’ কুমড়া পাওয়া যায়। প্রতিটি কুমড়ার দাম আকার ভেদে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ক্ষেত থেকেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা কুমড়া কিনে নিয়ে যায়। তাই আমাদের বাড়তি কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়না।
পাইকারী ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া সুস্বাদু ও আকৃতিতে বড় হয় বলে চাহিদা বেশি। এবছর তিনি আড়াই লক্ষ টাকার মিষ্টি কুমড়া পাইকারী ক্রয় করেছেন। ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশরাফ উজ্জামান জানান, কৃষকরা ফুলকপি, আলু, আখ চাষের সঙ্গে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছে। কম খরচে ভালো লাভ পাচ্ছেন। তাই দিন দিন এখানকার কৃষকরা মিষ্টি কুমড়া আবাদে ঝুঁকে পরছে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।