শিবালয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া ২নং মধ্য নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠ দান। হুমকির মুখে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর জীবন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু বিশুদেব বিশ্বাস বলেন, ‘১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকারের সময়ে শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর আলোকদিয়া চরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের কারণে আগে বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়েছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক। পাঠদানের জন্য শিক্ষক রয়েছে চারজন। গত বছরের বর্ষায় বিদ্যালয়টি যমুনা নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় আর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আলোকদিয়া চরের আশ্রয় কেন্দ্র বাজারের পেছনে খোলা আকাশের নিচে চারজন শিক্ষক নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,শিবালয় উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে আলোকদিয়া চরের আশ্রয় কেন্দ্রের বাজারের পেছনে দুইকক্ষ বিশিষ্ট একচালা একটি টিনের ঘরে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাকি শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া একচালা টিনের ঘরটির ও চারপাশে কোনো বেড়া নেই। সামান্য বাতাসেই ধুলাবালিতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে বসে থাকতে হয়।

Manikganjj-1902081127

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়,খোলা আকাশের নিচে এবং বেড়া না থাকা টিনের ঘরে তাদের পড়ালেখায় প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। শীতের সময় ঠান্ডা বাতাসে আর গরমের সময় ধুলাবালিতে বসে থাকা যায় না। এতে করে মাঝে মধ্যেই তাদের বিভিন্ন ধরনের অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বসার জন্য প্রয়োজনীয় বেঞ্চ,টেবিল না থাকায় গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। এতে পড়ালেখার বেশ সমস্যা হয়।

তেওতা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ‘এ চরাঞ্চলের জীবনমান ও অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। এখানে পড়ালেখার চেয়ে কাজের মূল্যায়ন বেশি। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে অনেক খরচ হয়। বিদ্যালয়ের কোনো ভবন নেই। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো দরকার।’

অবিভাবকরা বলেন,‘দীর্ঘদিন ধরে ছেলে-মেয়েরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে। আশেপাশে কোনো বিদ্যালয় নেই। বাধ্য হয়ে এখানেই পড়াতে হচ্ছে। সরকার যদি একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে পাঠ দানের পরিবেশ সৃষ্টিকরে দেন তাহলেই ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানো সম্ভব হবে।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষুদেব বিশ্বাস বলেন, ‘গত বছরের বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীতে বিলিন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আশ্রয়ন বাজারের পাশে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কিছু শিক্ষার্থীদের টিনের রুমে আর বাকি শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে কোনোভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি।’

শিবালয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাবেরা সুলতানা বলেন,‘ভূমি জটিলতার কারণে ওই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে শিক্ষা অধিদফতরের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে আবেদন করা হয়েছে এবং ভূমি জটিলতা সমাধান হলে দ্রুত একটি ভবন নির্মাণ করে দেয়া হবে ‘

 

happy wheels 2

Comments