বাল্যবিয়ে এখনও বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা

ঢাকা থেকে সুদিপ্তা কর্মকার

বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ হলো অশিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, অসচেতনতা ও অর্থনৈতিক সংকট বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আলোচকরা। সম্প্রতি বাল্যবিবাহ সর্ম্পকিত আইন নিয়ে বারসিকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ও আলোচকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, ‘বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, এই বন্ধনের মাধ্যমে একটি জাতি বংশ পরম্পরায় নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে বিয়ে নামক এই বন্ধনটির জন্য একটি মেয়ে অথবা একটি ছেলের শারীরিরক এবং মানসিক বিকাশ পুরোপুরি হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ভবিষ্যতে নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হয় । এমনকি একটি ভঙ্গুর প্রজন্ম তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বাল্যবিবাহ আমাদের দেশের এখনও একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা।’ বক্তারা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের বয়স ২১ বছর হওয়া প্রয়োজন। আর যদি বিয়ের সময় মেয়ে অথবা ছেলে দুইজন অথবা কোন একজন এর বয়স এই বয়সের কম হয় তাহলে তাকে বাল্যবিবাহ বলে এবং যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইনকে খুব কমই মান্য করা হয়, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের হার অত্যন্ত বেশি।’

20190618_143421
বারসিকের উদ্যোগে কোয়ালিশন ফর দি আরবান পুয়র মিলনায়তন (কাপ) এ বিবাহ সম্পর্কিত আইন: বাল্যবিবাহ ও এর প্রভাব শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা রহয়। উক্ত কর্মশালায় পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তির ২২জন নারী এবং কিশোরী উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় প্রধান সহায়কের ভূমিকা পালন করেন নারী উন্নয়নকর্মী এবং জেন্ডার বিশ্লেষক কাজী সুফিয়া আখতার। আরও উপস্থিত ছিলেন বারসিক’র সহযোগী প্রকল্প সমন্বয়কারী ফেরদৌস আহমেদ ও সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা সুদিপ্তা কর্মকার।

বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে কাজী সুফিয়া আখতার বলেন, ‘বিয়ের জন্য একটি মানুষের শারীরিরক এবং মানসিক বিকাশ সম্পুর্ণ হওয়া দরকার। যেহেতু মেয়েরা বিয়ের পর সন্তান ধারণ করে তাই শারীরিরকভাবে তার জন্য উপযুক্ত হওয়া প্রয়োজন, তা না হলে মা এবং শিশু দুইজনারই অপুষ্টিজনিত রোগের সম্ভাবনা প্রবল থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাল্য বিবাহের ফলে মাতৃ মৃত্যুও এবং শিশু মৃত্যুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। মেয়েরা স্কুলে যেতে পারেনা, পড়াশোনা করতে পারেনা। তাই জীবনে সঠিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। অল্পবয়সে বিয়ের কারণে কম বয়সে অধিক সন্তানের জননী হচ্ছে। যার ফলে দেশের জনসংখ্যাবৃদ্ধি পাচ্ছে অত্যধিক হারে এবং সংসার এর ব্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম বয়সে বিধবা হবার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসকল মেয়েরা শশুর বাড়ি থেকে বিতারিত হচ্ছে এবং শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

কর্মশালায় উপস্থিত ৮ জন কিশোরীকে স্কুলে যাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করায় তারা ৩ জন স্কুলে যায় বলে জানায়, বাকি ৫জন ২য় অথবা ৩য় শ্রেণীর পর আর পড়াশোনা করেনি। কারণ বাসায় বাবা মা উভয়ই কাজ করেন। তাই ছোট ভাইবোন এবং বাসার কাজ করতে হয়, কারও পড়াশোনা বাবা মা বন্ধ করে দিয়েছে।

20190618_151151

কর্মশালায় উপস্থিত মায়েরা বলেন ‘এখন মেয়েরা একটু বড় হলেই যেমন ১২-১৪ বছর বয়স হলেই আসে পাশের সবাই বলতে শুরু করে কেন মেয়ে বিয়ে দিচ্ছি না, আজেবাজে কথা ছড়ায়। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়ে বিয়ে দিতে হয়।’ অনেকে আবার বলেন, ‘বাসায় মেয়েরা একটু বড় হলেই ছেলেরা ডির্স্টাব করা শুরু করে, মেয়েদের সাথে প্রেম করতে চায়, মেয়ে সম্পর্কে রাস্তাঘাটে খারাপ কথা বলে, অনেক সময় ঘরের ভিতরে চলে আসে, তাই নিরাপত্তার অভাবে এবং মান সম্মানের ভয়ে তারাতারি বিয়ে দিয়ে দেয়।’

বারসিক’র সুদিপ্তা কর্মকার তার আলোচনায় বলেন, ‘সরকারের বিয়ে সংক্রান্ত আইন এ স্পষ্ট বলা আছে, কোন বাল্যবিবাহ দিলে স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুরী, বাবা, মা, বিয়ে পড়ানোর কাজী এবং যারা এই বিয়েতে সাহায্য করবেন সবার জেল জরিমানা হবে। জোর করে বিয়ে দেবার ক্ষেত্রে পুলিশ এর কাছে যেতে না পারলে ৯৯৯ ফোন করলে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ চলে আসছেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।’

happy wheels 2

Comments