মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে কমে গেছে কাউন চাষ
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন ও সত্যরঞ্জন সাহা
কাউন চাষ বিলুপ্তির পথে। কারণ হিসাবে কৃষক সুনিল বিশ্বাস (৫২) বলেন, “কাউন লওয়া ও চাল করা খুব কষ্ট। কাউনের চাল করতে কাঠের ঢেকি লাগে; এলাকায় এখন ঢেকি নাই চাল ভাঙ্গানোর মেশিনের জন্য। মেশিনে কাউনের চাল করা যায় না, কাউন গুড়া হয়ে যায়।”
৮ বছর আগে হরিরামপুর উপজেলার বয়রা, রামকৃষ্ণপুর, হারুকান্দি, লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ী, আজিমনগড়সহ চরাঞ্চলে অনেক কাউন চাষ করা হত। বর্তমানে হরিরামপুরে ৫ থেকে ৬ জন কাউন চাষ করে থাকেন সাথি ফসল হিসাবে। তার মধ্যে হরিরামপুর জেলার পাটগ্রামচরে কৃষক আব্দুল মান্নান, বদুর উদ্দিন, হালুয়াঘাটা গ্রামের আলাল উদ্দিন এবং বয়রা ইউনিয়নের কর্মকারকান্দি গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী (৬০) কাউন চাষ করছেন। এই প্রসঙ্গে কর্মকারকান্দি গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী (৬০) বলেন, “আমি ৪০ বছর ধরে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। আমি আমার বাপের সাথে কৃষি কাজ করেছি। আমরা আগে থেকেই তিল, কাউন, বাদাম, সরিষা চাষ করতাম। আগে কাউন ৪/৫ বিঘা কাউন বুনতাম। এখন আর বেশি চাষ করি না। বাদাম, তিল এর সাথে কাউন মিশ্র ফসল হিসেবে চাষ করি।”
কাউন চাষ কমে যাওযার কারণ হিসেবে কৃষক আহম্মদ আলী বলেন, “দেশে ইরি ধান (বোরে) ও ভুট্টার আবাদ আসার কারণে তিল, কাউন চাষ কমে যাচ্ছে। এছাড়া নদী ভাঙনের ফলে আমাদের অনেক জমিজমা ছিল যেখানে কাউন চাষ করতাম। তখন বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে আম, কাঁঠালের দিন কাউনের জাউ রান্না করে আম কাঁঠাল দিয়ে খাইতাম। কাউনের ভাপা পিঠা, চেতু পিঠা, পায়েশ, খির, জাউ রান্না করে খাওয়া যায়।” তিনি আরও বলেন, “সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে কাউন বপন করলে ভালো ফলন আশা করা যায়। অনেক কৃষক ফাল্গুন মাসে বপন করেন। বেলে দোআঁশ মাটিতে কাউন ভালো হয়।”
এলাকার কৃষকরা জানান, যেসব এলাকায় সেচের ব্যবস্থা নাই, সেখানে কাউন, গম, পায়রা, অন্যান্য রবিশষ্য পাশাপাশি কাউন চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। হরিরামপুর উপজেলায় ৬ থেকে ৭ জন কৃষক কাউন চাষ ধরে রেখেছেন। নতুন প্রজন্মদের কাছে কাউন চাষ ও খাওয়ার বিষয়গুলো অনেকটা অপরিচিত। লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠনের সদস্য সোনামিয়া (৫৬) বলেন, “যদি আমরা তিল, কাউন, বাদাম, সরিষা, গম পায়রা চাষ, বীজ সংরক্ষণ, তথ্য আদান প্রদান বীজ বিনিময় না করি তাহলে একসময় এই সব চাষাবাদ আমাদের কাছ হারিয়ে যাবে।”
উল্লেখ্য যে, বারসিক হরিরামপুর উপজেলার স্থানীয় জাতের তিল, কাউন, গম পায়রা, সরিষা, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। কৃষক-কৃষাণী, ছাত্র-যুবক ও প্রবীণ অভিজ্ঞ কৃষকদের নিয়ে গ্রামপর্যায়ে আলোচনা, তথ্য আদান-প্রদান, অভিজ্ঞতা বিনিময়, গম পায়রার, কাউন খাদ্য উৎসব, বীজ মেলায় বীজ বিনিময় করে কৃষি বৈচিত্র্য চাষাবাদের মাধ্যমে সংরক্ষণে উৎসাহ প্রদান করে আসছে।