ধলেশ্বরী নদী দখল করে মিল-কারখানাসহ স্থাপন বন্ধ করুন
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক
মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী দখল করে মিল-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় ক্ষোভ জানালেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। অনতিবিলম্বে সিংগাইর উপজেলার ধল্লা এলাকায় এই নদী দখলমুক্ত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় কমিশনের চেয়ারম্যান এই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ধলেশ্বরী নদীর অবৈধ দখল দেখার আগে আমার মরে যাওয়া ভালো ছিল। আমি এমনভাবে নদী দখল দেশের কোথাও দেখিনি। শুধু নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানই নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ দখলের চিত্র আমাকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।”
ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, “নদী দখল যেই করুক অবিলম্বে দখলমুক্ত করা হবে। সবার আগে ব্যবস্থা নিতে হবে শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে। যাতে ছোট ছোট পক্ষ নিজ উদ্যোগেই নদীর দখল ছেড়ে পালিয়ে যায়।” তিনি আরও বলেন, “নদী রক্ষায় হাইকোর্টের যে রায় আছে, সেই রায়ের আলোকে নিজ নিজ জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দফতর সহজেই নদীকে দখল ও দুষণমুক্ত করতে পারবে।” তিনি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক মো. নাজমুছ সাদাত সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- নদী কমিশনের সদস্য (সার্বিক) মো. আলাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছরোয়ার ছানু, ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম আরজু, যুগ্ম আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, সদস্য দীপক কুমার ঘোষ ও ইকবাল হোসেন কচি। এর আগে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ধল্লা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর দখল ও দূষণের বিষয়টি ঘুরে দেখেন।
প্রসঙ্গত, সিংগাইর উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত ধলেশ্বরী নদীর চর জেগে উঠলে ১৯৮৬-৮৭ সালে চাষাবাদের জন্য ভূমিহীনদের ১৫ বছর মেয়াদি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে অনেক ভূমিহীন বন্দোবস্ত পাওয়া জমি নামমাত্র টাকায় প্রভাবশালীদের কাছে হস্তান্তর করেন। আবার অনেকের জমি দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা। মূলতঃ এই প্রভাবশালীরা পরবর্তী সময়ে সব জমি ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে সিংগাইর উপজেলা কৃষি ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় বন্দোবস্ত দেয়া ২৯৭টি কেস বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি,২০১২ সালের ১১ অক্টোবর ১৬৪৩ নম্বর স্মারকের ভূমি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে তৎকালিন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুন্সী শাহাবুদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেন, ওই সব জমি বছরের বেশির ভাগ সময় ধলেশ্বরী নদীর পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এখানে স্থাপনা গড়ে তোলা হলে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে, যা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
নদী তথা পরিবেশ রক্ষায় তিনি এই ২৯৭টি বন্দোবস্ত কেস বাতিলের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। সে থেকে ধল্লা মৌজার বন্দোবস্ত দেয়া খাস জমি হস্তান্তর, নামজারি, খাজনা গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। সে অনুযায়ি দীর্ঘদিন ওইসব জমির সকল দালিলিক কার্যক্রম স্থগিত থাকে। সম্প্রতি সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদীর উপর ভাষা শহীদ রফিক সেতুর উত্তর পাশে নদী ভরাট করে বেশ কিছু স্থাপনা গড়ে ওঠেছে। সেতুর মাত্র ২‘শ মিটার উত্তরে নর্দাণ পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের নির্মাণ কাজ চলছে। এ নিয়ে গত ৪ জুন স্থানীয় বাসিন্দারা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান বরাবর ৩ শতাধিক ব্যক্তি স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া পদ্মা গ্রুপ অব কোম্পানিজ হাই কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।