নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ পরিবার থেকেই করে দিতে হবে
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা
কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের ভারতের মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামে বাস করেন শিখা মানখিন (২১)। তিনি কলমাকান্দা ডিগ্রী কলেজের বিএ ২য় বর্ষে পড়াশুনা করছেন। এতদিন মা বাবা ভাই বোন আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে ছিল তার পরিবার ও বিচরণ। এখন এসবের গন্ডি পেরিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করে নতুন আরো একটি পরিবারে যুক্ত হলেন। তার নতুন পরিবার হলো উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা।
বারসিক সংস্থার মাধ্যমে শিখা জানতে পারেন যে, ঢাকা সাভার জিরাবো, নরসিংহপুরে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কৃষি প্রশ্কিষণ কেন্দ্রে নারীদের কারিগড়ি দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করার জন্য ৫টি ট্রেডে (১. মাশরুম চাষ ও জৈব চাষাবাদ, ২. পেস্ট্রি এন্ড বেকারী প্রোডাকশন, ৩. হর্টিকালচার এন্ড নার্সারী, ৪. ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং, ৫. কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন) প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ আছে।
ট্রেডগুলোর মধ্যে তিনি ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং ট্রেডটি পছন্দ করে। অতঃপর ৩ মাস মেয়াদী সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করে পড়াশুনা করতে থাকেন। এরই মাঝে কলমাকান্দা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণের প্রকল্প চলে আসে। প্রকল্পের আওতায় ২টি ট্রেডের মধ্যে একটি হলো আধুনিক দর্জি বিজ্ঞান অপরটি ভার্মি কম্পোষ্ট।
এই প্রকল্পের জন্য শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে শিখা তাতে আবেদন করেন সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে। কয়েক মাস পর ইন্টারভিউ হলে শিখা সেলাই প্রশিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন। এপ্রিল-জুন ২০১৮ পর্যন্ত প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে ২৮ জুন ২০১৮ তারিখে সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীরা হাজির হয় তাদের সেলাই করা বিভিন্ন আইটেমের ড্রেস নিয়ে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও শিখার জন্য উপহার রেখে যান।
প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার বলেন, “মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নারীরা চাকুরি করার ক্ষেত্রে সুযোগ পায়, নিজেরাও উদ্যোক্তা হতে পারে। এখানে সম্পূর্ণ সরকারি খরচেই আবাসিকভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। উপরোন্ত প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য প্রতিমাসে ৩০০ টাকা ভাতাও প্রদান করা হয়।” তিনি আরও জানান, এছাড়াও মেধাতালিকার ভিত্তিতে উচ্চ শিক্ষার জন্য জাপানে প্রেরণ করা হয়। নারীরা আত্মনির্ভরশীল হলে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন হ্রাস পাবে। শিখা মানখিন প্রশিক্ষণ নিয়ে এখানেই চাকুরি করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।”
পড়াশুনা করার পাশাপাশি নিজের জন্য কিছু করতে চাওয়া শিখা মানখিন বলেন, “এই সার্টিফিকেট দিয়ে আমি চাকুরি করার সুযোগ পাব এটা আমি কখনই চিন্তা করিনি। আমি আমার ও পরিবারের পোষাক তৈরির কথা চিন্তা করে সাভারে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এখন এই সার্টিফিকেটের জন্যই আমি এখানে চাকুরি পেলাম। এর ফলে আমার বেকারত্ব দূর হলো।” তিনি আরও বলেন, “এখন আমি আমার নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই বহন করতে পারি, ছোট বোন ঢাকায় অনার্সে পড়ে তাকেও সহযোগিতা করি, মা বাবাকেও পরিবারের খরচ চালানোর জন্য টাকা দিই। এখন আমাকে দেখে অনেক মেয়ে ঢাকা সাভারে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করছে। আমি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করি।” তিনি জানান, তবে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। অনেক অভিভাবকেরাই মেয়েদেরকে দীর্ঘদিনের জন্য পরিবার থেকে দূরে রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়াতে চায় না। তাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া উচিত। মেয়েদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ পরিবার থেকেই করে দিতে হবে।