টুং টাং শব্দে মাতোয়ারা কামারশালা
বাহলুল করিম, সাতক্ষীরা থেকে:
রাত পেরোলেই পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। ঈদ-উল-আযহায় কোরবানির পশু জবাইসহ মাংস প্রস্তুতে অপরিহার্য হাতিয়ার তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কামারেরা। টুং টাং শব্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে কামারশালাগুলো। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করছেন তারা। কেউবা হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটাচ্ছে আবার কেউবা ধার দিচ্ছে ছুরি বা বটিতে। আবার কেউবা হপার টানছে, কেউবা কাটছে লোহার পাত। এভাবেই টুং-টাং বা ঘস-ঘস শব্দে কর্মযজ্ঞ চলছে কামারশালায়। এই কর্মব্যস্ততা থাকবে ঈদের দিন পর্যন্ত।
এদিকে, কয়লা, ইস্পাত ও বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার ছোরা, বটি, চাপাতিসহ অন্যান্য হাতিয়ার তৈরিতে একটু বেশিই মজুরী নিচ্ছেন কামাররা। সরেজমিনে কামারশালাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, টুং-টাং শব্দে মুখরিত কামারশালাগুলো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কাজ নিয়ে আসছে কামারশালায়। ছুরি, দা, বটি, চাপাতি, কুড়াল তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কামাররা। কামারদের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে এক একটি সরঞ্জাম। গত বছর কোরবানির সরঞ্জাম তৈরির মজুরী কম থাকলেও এবছর মজুরী একটু বেড়েছে। গত বছর ছুরি ৮০-৯০ টাকা, চাপাতি চার’শ থেকে সাড়ে চার’শ টাকা, দা তিন’শ থেকে সাড়ে তিন’শ টাকা, বটি সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ টাকা ও কুড়াল তৈরিতে সাড়ে চার’শ টাকা মজুরী ছিল। কিন্তু এবছর ছুরি এক’শ টাকা, চাপাতি চার’শ থেকে সাড়ে চার’শ, দা সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ টাকা, বটি সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ টাকা ও কুড়াল তৈরির মজুরী বেড়ে পাঁচ’শ টাকা হয়েছে। ঈদের শেষ মুহূর্তে সবাই ভীড় জমাচ্ছে কামারশালায়। ক্রেতাদের দাবি, গতবারের তুলনায় এবার দাম একটু বেশি। কিন্তু কামাররা বলছেন, কয়লা ও লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার মজুরি একটু বেশি নিতেই হচ্ছে।
কামারশালায় কাজ নিয়ে আসা শহরের মুনজিতপুরের বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার সরঞ্জাম তৈরির দাম একটু বেশি। কারণ এখন কাজের চাহিদা অনেক বেশি। গতবছর চাপাতি ধার দিতে ৫০টাকা নিয়েছিল। কিন্তু এবার বলছে এক’শ টাকা দিতে হবে।” এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মোড়ের কামার একোব্বর হোসেন বলেন, “গতবারের তুলনায় এবার কাজের চাপ খুব বেশি। এতো কাজ যে একা করে পারছি না। ঈদ যত এগিয়ে আসছে কাজের চাপ ততো বাড়ছে। মানুষ কাজ নিয়ে আসছে আর খুশি মনে সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ি ফিরছে। এখন জবাই ছুরি, চাপাতি, চামড়া ছোলা ছুরি, বটি, দা ও কুড়ালের কাজ বেশি পাচ্ছি। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কোরবানির ঈদে কাজ বেশি থাকে।” মজুরি বেশি নেয়ার ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, “কয়লা, ইস্পাত ও বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার মজুরি একটু বেশি নিতে হচ্ছে। গত বছর যে কয়লা চার’শ টাকা বস্তা দরে কিনেছি সেই কয়লা এবছর পাঁচ’শ টাকা বস্তা দরে কিনতে হচ্ছে। গতবার ইস্পাতের কেজি প্রতি ৮০-৯০ টাকা ছিল। কিন্তু এবছর এক’শ ২০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। যেহেতু সব জিনিসের দাম বেশি তাই মজুরিও একটু বেশি নিতে হচ্ছে। এজন্য ক্রেতাদের কাছে দাম বেশি মনে হচ্ছে। সব কিছুর দাম যদি বেড়ে যায় তবে আমাদের মজুরিও বাড়াতে হয়।”
শহরের মুনজিতপুরের অপর এক কামার মো. আব্দুল গফুর বলেন, “কোরবানির ঈদে নতুন জিনিস বানানোর থেকে ধার দেওয়ার কাজের চাহিদা বেশি থাকে। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারও কাজের চাপ বেশি। ঈদের সময় পানানোর (ধার দেওয়া) কাজ বেশি আসে বানানোর কাজ কম আসে। দা, বটি, ছুরি, কোপা ইত্যাদি তৈরি করছি।”
সকাল থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলবে এই কাজ। পানানোর মজুরি বড় ছুরি এক’শ টাকা, ছোট ছুরি ২০-৪০টাকা ও কোপা এক’শ টাকা। ইস্পাতের ধরণ বিশেষ মজুরির ভিন্নতা দেখা যায়। দাম অনেকটা আবার শ্রমের উপরও নির্ভর করে। গত বছর কয়লার দাম কম ছিল কিন্তু এবছর দাম বেশি। এবছর প্রতি ঝুড়ি কয়লা ৭০-৮০টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। তবে মজুরি খুব বেশি বাড়েনি। দুই-একটা জিনিসের মজুরি হয়তো বেড়েছে। অন্যান্য জিনিসের মজুরি আগের মতোই আছে। তবে ঈদ যত এগিয়ে আসছে কাজের চাপও বেশি হচ্ছে।