তানোরে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
রাজশাহী থেকে অসীম কুমার সরকার
রাজশাহী জেলার তানোরে এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। স্বল্প খরচে অল্প সময়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এ সরিষার আবাদ। বর্তমানে সরিষা ক্ষেতগুলো হলুদ আর সাদা ফুলে ভরে উঠেছে। এ সুযোগে সরিষাফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত মৌমাছির দল। আর সেই সরিষার ক্ষেতের পাশে শতাধিক মৌমাছির বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে এ বছর উপজেলার ১৭ শত ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ না করায় দ্রুত বেড়ে উঠছে সরিষার চারা। কয়েকদিন পরেই শুরু হবে সরিষা সংগ্রহ। আমন ও ইরি মৌসুমের মাঝে অবশিষ্ট যে সময় থাকে, সে সময়ে কৃষকেরা জমি ফেলে না রেখে সরিষা আবাদের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এছাড়াও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সরিষা আবাদ করতে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তাছাড়া জমিতে সরিষার আবাদের ফলে জমির উর্বতা বৃদ্ধি পায়। ফলে পরবর্তীতে ইরি-বোরো চাষাবাদের সময় সার ব্যবহারের খরচ কমে আসে।
কৃষকরা জানায়, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা আবাদ অধিক লাভজনক। তাছাড়া এ সরিয়া উৎপাদনে সময় কম লাগার ফলে বছরে একই জমিতে অনায়াসে তিনটি ফসল চাষ করতে পারেন তারা। ফলে গেল বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ পরিমাণের জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, যদি বাজারে সরিষার ন্যায্য দাম পাওয়া যায়, তাহলে আগামীতে সরিষার আবাদ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
দুবইল গ্রামের কৃষক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছর ধরে আমি সরিষা চাষ করছি। এই বছর আমি ২০ বিঘা জমিতে বারি ও বিনা জাতের সরিষা চাষ করেছি। আমাদের এই জমিগুলো অন্যান্য জমির চেয়ে উন্নত মানের। এই জমিতে সরিষা ফলন ভালো হয়। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ আর সহযোগিতায় আমরা সরিষা আবাদ করছি।’
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তানোর কৃষকরা কয়েক বছর আগেও সরিষা চাষে তেমন আগ্রহী ছিল না। কিন্তু কৃষি বিভাগের উৎসাহ-সহযোগিতায় কৃষকরা সরিষা চাষে এগিয়ে আসেন। পরবর্তীতে অল্প সময় অল্প খরচ আর স্বল্প শ্রমে বেশি মুনাফা পাওয়ায় প্রতি বছরই এখানে সরিষার আবাদ বাড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার এই উপজেলায় ১৫শত ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১৭ শত ৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার কামারগাঁতে ১ শত মৌমাছি বক্স স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’