তরুণরাই গড়তে পারে একটি নিরাপদ সমাজ
সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
খেলাধুলা ও সাংষ্কৃতিক চর্চা করি, মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করবো এক সাথে’-এসব স্লোগানের আলোকে সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের ছাত্র ও যুব কল্যাণ উন্নয়ন সংঘের আয়োজনে বারসিক’র সহায়তায় বাল্য বিয়ে, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, ধর্ষণ ও মাদক প্রতিরোধে যুব সমাজের ভাবনা ও করণীয়’ বিষয়ে যুব কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রতি।
কর্মশালায় শামীম হোসেন বলেন, ‘একটি আদর্শ যুব সমাজ দেশের সম্পদ। যুবরাই গড়তে পারে বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, ধর্ষণ ও মাদকমুক্ত একটি নিরাপদ সমাজ। তাই যুব সমাজকে হতে হবে উদার, মানবিক, চরিত্রবান, নীতিবান, দায়িত্বশীল ও দক্ষ। নবীন প্রবীণ সকলে মিলে এক সাথে আমাদের যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে, গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। তিনি আরো বলেন, ‘মাদকের ভয়াবহতার কারণে ইভটজিং, নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু যিনি ধর্ষিতা, নির্যাতিতা, ইভটিজিং শিকার তার প্রতি আমাদের সহযোগিতা, সহানুভুতিশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাদের পাশে থাকতে হবে।
কর্মশালায় শামীম হোসেন বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ে মা সমাবেশ অভিভাবক সভা, উঠান বৈঠক করতে হবে, প্রতিটি গ্রামে ওয়ার্ডে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে, ইউনিয়ন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি সক্রিয় করতে হবে, জন্মনিবন্ধন ব্যাতিত বিবাহ রেজিষ্ট্রি বন্ধ করতে হবে এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনের ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালাতে হবে।’
কর্মশালায় ইংরাজ আলী বলেন, ‘বাস্তবতায় বাল্য বিবাহ নিরোধের সফলতা দেখা গেলেও আসলে তা খুবই অপ্রতুল। গ্রামে অস্বাভাবিকভাবে বাল্য বিবাহ বেড়ে গেছে। যে সব সুবিধাবঞ্চিত মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে তারা অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে ঝরে পড়ছে। তারাই বাল্য বিবাহের বেশি শিকার হচ্ছে। এভাবে তাদের জীবন ও ভবিষৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। অপরিণত বয়সে বিয়ে হওয়ায় মা হওয়ার সময় অপুষ্টিজনিত কারণে অকাল গর্ভপাত হয় এবং মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ‘বাল্য বিবাহের ফলে সংসার এর দায়িত্ব পড়ে একজন অপরিণত বয়সী মেয়ের কাঁধে। বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়। শ্বশুর বাড়ির চাপে সৃষ্টি হয় পারিবারিক অশান্তি ,পারিবারিক কলহ, তৈরি হয় নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতা। অনেকসময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কাজেই বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আরো বেশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে, যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’
বারসিক আঞ্চলিক সমন্বযকারি বিমল রায় বাল্য বিবাহ নারী নির্যাতন ইভটিজিং, ধর্ষণ ও মাদকের আইন ও নীতিমালা তুলে ধরে বলেন, ‘বাল্য বিবাহ পরিচালনায় ও সহযোগিতায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে অভিভাবকদের যথাযথ প্রচেষ্টা গ্রহণ না করার ফলে আরো গুরুতর অপরাধের সৃষ্টি করে এবং তাদের অনুসরণ করে অধিক হারে বাল্য বিবাহের প্রবণতা বেড়ে যায়। আমাদের সরকারি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আইনগত সহায়তাও নিতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব বাড়াতে হবে।
বারসিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি শামীম হোসেন’র সভাপতিত্বে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি আসমান, ব্রী-কালিয়াকৈর পল্লী উন্নয়ন যুবক সমিতির সভাপতি মো. ইংরাজ আলী, বলধারা ইউ.পি সচিব মো. সেলিম মোল্লা, ইউপি সদস্য মো. বাবুল সরদার, লেমুবাড়ি বিনোদা সুন্দরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আলামিন হোসেন, বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়, প্রোগাম অফিসার শিমুল কুমার বিশ^াস, সহযোগি কর্মসুচী কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল, যুব নেতা, মো. হায়দার আলী তারা, সাবেক ইউপি সদস্য চানবর আলী, বাংগালা নব কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সহ-সভাপতি সুভাষ মন্ডল, যুব সদস্য বাদশা মিয়া, এরশাদ আলী, জুনায়েদ জিয়া নাইম হোসেন, মনির হোসেন, জাহিদ হাসান, সেলিম আল মামুন ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যসহ ৭৫ জন কর্মশালায় অংশগ্রহন করেন।