শ্যামনগরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জনকর্মশালা অনুষ্টিত

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মনিকা পাইক, রুবিনা পারভীন ও বিশ্বজিৎ মন্ডল

বারসিক’র আয়োজনে ও উপকূলীয় এলাকার স্বেচ্ছাসেবক টিম সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, সিডিও ইয়ুথ টিম ও পুষ্টি ভিত্তিক কৃষির মাধ্যমে ‘পুষ্টি ব্যাংক’ বা শত বাড়ির কৃষক-কৃষাণীর সহযোগিতায গত ১৩ নভেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও কোভিড -১৯ মোকাবেলায় জন কর্মশালা অনুষ্টিত হয়েছে। কর্মশালাটি দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের কৃষক নিরাঞ্জন জোয়ারদারের বাড়িতে অনুষ্টিত হয়।


কর্মশালায় সভাপতি হিসাবে উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে প্রবীণ কৃষক নিরাঞ্জন জোযারদার ও নারী মৌমাছি চাষী করুনা রানী সরদার অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও উপজেলার সে¦চ্ছাসেবক টিম সিডিও ও এসএসটির যুব প্রতিনিধিরা, বারসিক শ্যামনগর সকল অফিস স্টাফ, বারসিক’র পরিচালক পাভেল পার্থ ও সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম এবং উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের শতবাড়ির বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।


কর্মশালার লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে কর্মশালার সহায়ক পাভেল পার্থ, ‘এই কর্মশালার মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় প্রতিনিয়ত দুর্যোগ হয় তার জন্য আগে, সময় এবং পরে নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় সেটি এবং অতীতে নানান ধরনের যে মহামারি হয়েছিলো এবং বর্তমান সময় আলোচিত বিষয় করোনা ভাইরাস কোনটি ভয়বাহ ছিল্ োসেটি জানা এবং একই সাথে করোনা এই সময়ে নিজেদেরকে কি ধরনের স্বার্থপরতা তৈরি, কোন আতঙ্ক, কি ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে, সে সমস্যা সমাধানের জন্য কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সেসব বিষয়গুলো পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে জানা এবং এখান শিক্ষণীয় বিষয়গুলো জানা বোঝার চেষ্টা করবো।’


কর্মশালায় সকল অংশগ্রহণকারীরা কম বেশি নানান ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের কৃষাণী মাধবী গাইন বলেন, ‘করোনার সময় আমার জ¦র, সর্দি, কাশি হয়েছিলো সেটাকে আমি ও আমার বাড়ির লোক করোনা ভেবে নিয়েছিলাম। আমার ভালোয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমার দেড় বছরের এক দুধের শিশু ছিলো। ঐ সময়টা আমি তার কাছে থাকতে পারিনি।’ অংশগ্রহণকারী শেফালী বেগম, অল্পনা মিস্ত্রি, সীমা রানী, শর্মা রানীরা জানান, করোনা দুর্যোগের সময় পানির জন্য হাহাকার করতে হয়েছে। কেউ কারো পুকুরে পানি আনতে দিতো না। সবাই নিজেদের বাড়ির যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। এই সময় অনেক পরিবারকে লবণ পানি ব্যবহার করতে হয়েছে।’


প্রবীণ কৃষানী করুনা রানী মন্ডল বলেন, ‘আমি বছরে প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো করে সবজি বিক্রি করতাম। তবে করোনার সময় আমি সবজি বিক্রি করতে পারতাম না। তাই গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেছি। আমার বয়স বেশি হওয়ায় কতদিন কিভাবে বাঁচবো ভয় করতাম।’


অন্যদিকে জয়নগর গ্রামের কৃষাণী অর্চনা রানী বলেন, ‘আমরা বাড়ির লোকেরা খুব বেশি করোনা সম্পর্কে জানতাম না। কিন্তু আমার ৫ বছরি ছেলে সে টিভিতে কার্টুন দেখে আমাদের সচেতন করিয়েছে। তাই আমরা বাড়ির বাইরে গেলে মুখে মাস্ক পরি এবং সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করি। সে আমাদের যেমন সচেতন করেছে আমাদের বাড়ির আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করেছে। আমরা বড় হলেও তার কথা শুনেছি।’
স্বেচ্ছা সেবক সিডিও ও এসএসটি যুব প্রতিনিধিরা জানান, করোনার সময় তারা কেউ ঘরে বসেনি। এই সময় কাইরে গিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেন। করোনাকালীন এই সময়ে তারা মানুষকে সাবান দিয়েছে, খাদ্য পেতে সহায়তা করেছে, বিভিন্ন স্থানে নিশানা তৈরি করেছে, হ্যান্ড বিল ও পোষ্টার বিতরণ করেছে, প্রসুতি মায়ের সেবা, বিভিন্ন অসুস্থ মানুষকে রক্তদান করেছে, করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকার করেছে বলে তারা জানান।

যুবকরা আরও জানান, করোনা চলাকালীন সময ঘুর্নিঝড় আমফান হলে তারা এলাকার মানুষকে নিরাপদে থাকার জন্য বিভিন্ন মাইকিং করেছে, সচেতন থাকতে বলেছে, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, খাদ্য ব্যবস্থা করেছে, বেড়িবাঁধ সংস্কারে সহায়তা করেছে।

happy wheels 2

Comments