আমরাও এগিয়ে যাব
হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। হরিরামপুর উপজেলা থেকে মূল ভূমিতে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হয়। মূল ভূমিতে খেলার জন্য স্কুল কলেজে নির্ধারিত খেলার মাঠ থাকার কারণে কিশোরীরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ বেশি থাকে। কিন্তু চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ভাঙাগড়ার মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। প্রতিবছর বন্যা আর নদীভাঙনের কারণে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মাঠঘাটসহ অবকাঠামোগত অবস্থান পরিবর্তন হয়। খেলাধুলার মাঠ কম থাকার কারণে চরাঞ্চলের কিশোরীদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম থাকে। নিজ এলাকায় স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করলেও মূলভূমিতে বসবাসকারী কিশোরীদের চেয়ে চরাঞ্চলের কিশোরীরা একটু পিছিয়ে আছে। ফলশ্রæতিতে চরের কিশোরীরা সবসময় বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারে না এসব বাধা দিঙিয়ে।
হরিরামপুর চরাঞ্চলের কিশোরীদের এগিয়ে নিতে চরের যুব স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্য ও উদ্যোগী মানুষকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে কিশোরীদের খেলাধুলার আয়োজন করে থাকে। খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ উদ্দীপনা ও পুরস্কার দিয়ে সহযোগিতা করেন বারসিক। হরিরামপুর লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের জয়পুর, হরিহরদিয়া, নতুনহাট, সেলিমপুর গ্রামের শতাধিক কিশোরীদের নিয়ে ফুটবল, দৌড় প্রতিযোগিতা, দড়ি খেলার আয়োজন করেন। যাদের বয়স ১২-১৫ বছরের মধ্যে।
চরাঞ্চলের কিশোরীদের খেলাধূলা, লেখাপড়ার মাধ্যমে তাদের অধিকার, সমতায়ন ও সামাজিকীকরণে সচেতনতা বৃৃদ্ধি পাচ্ছে। অপর দিকে কিশোরীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দূরীকরণ, দৈহিক কাঠামো শক্তিশালীকরণে ভূমিকা রাখছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে, শাররীক কাঠামোকে শক্তি করে ও দুশ্চিন্তাকে দূরীভূত করে।
নটাখেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পলি আক্তার বলেন, ‘আমরাও এগিয়ে যেতে চাই। পরিবারে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের খেলাধূলাসহ সকল কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সে সুযোগ আমরাও কাজে লাগাতে চাই। স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন খেলাধুলা প্রতিযোগিতায় আমরাও অংশগ্রহণ করতে চাই। নারীদেরকে আর পিছিয়ে দেখার সুযোগ নাই।’
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের জয়পুর আদর্শ কিন্ডার গার্টেন এর সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চরাঞ্চলে খেলাধুলার তেমন নির্ধারিত মাঠ নাই। নদী ভাঙনের কারণে অনেক বিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তন হয় ফলে খেলার মাঠের কোন নির্দিষ্ট জায়গা থাকে না। চরের পতিত জমিতে ফাকা জায়গায় খেলাধুলা করে থাকে। তার মধ্যে ছেলেরা খেলাধুলা করলেও মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ কম থাকে। সমাজে নারীদের পিছিয়ে রাখতে চাই না। তারা যেন ছেলেদের মতো লেখাপড়া, খেলাধূলা, গান বাজনা আচার অনুষ্টান সকল জায়গা অংশগ্রহণ করতে পারে। সেই কারণে চরের মেয়েদের নিয়ে খেলা ধুলার অয়োজন কর হয়। তাছাড়া খেলাধুলা মনমানসিকতা ভালো রাখে এবং দেহ ও মনোবলে শক্তি সঞ্চার করে।’
হরিহরদিয়া যুব টিমের সভাপতি রাসেল মিয়া বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি কিশোরিদের খেলা-ধুলার মাধ্যমে শরীর স্বাস্থ্য্য ভালো থাকে। চরাঞ্চলে কিশোরীরা বিভিন্ন জায়গায় খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারে যুব টিম সহায়তা চলমান থাকবে।’
সম্প্রীতি হরিরামপুর উপজেলা প্রসাশন এডিপি অর্থায়নে উপজেলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ করেন। তার মধ্যে রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট খেলার উপকরণসমূহ ।
উল্লেখ্য যে, বারসিক ২০১০ সাল থেকে হরিরামপুর চরাঞ্চলে কাজ করে আসছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কিশোরীদের খেলাধূলা ও নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা আলোচনা সভা, গ্রাম পর্যায়ে কিশোরী নারীদের বয়োঃসন্ধিকাল বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা। ঘরে বাইরে নারীকে সমান মর্যাদা দেওয়া। তাছাড়াও চরাঞ্চলে জনসচেতনতা তৈরিতে নারী দিবস পালন, চরে গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মায়ের সেবা প্রদানের জন্য ধাত্রীমাতাদের প্রশিক্ষণ, জেন্ডার প্রশিক্ষণ, নারী প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে প্রচারণামূলক ক্যাম্পইন করা। বিলবোর্ড প্রদানের মাধ্যমে জন সচেতনতামুলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।